শেষে গিয়ে বার বার নাস্তানাবুদ বাংলাদেশ

২৭ নভেম্বর ২০২৪

শেষে গিয়ে বার বার নাস্তানাবুদ বাংলাদেশ

মাঠের পারফরম্যান্সে টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরই বেশ পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে চলতি বছর পাকিস্তানের মাটিতে দেশটিকে হোয়াইটওয়াশ করে এই ফরম্যাটে ভালো করার আশার আলো দেখিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। কিন্তু এরপরই আবার নিজেদের পুরোনো রূপেই ফিরে গেছে তারা। ব্যাটারদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স তো আছেই, এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে লোয়ার-অর্ডার ও টেইলএন্ডারের কাছে বার বার নাজেহাল হওয়া। কমবেশী প্রায় সব ম্যাচেই প্রতিপক্ষের শেষদিকের ব্যাটারদের কাছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তারা।

ঘরে-বাইরে মিলিয়ে ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে জয় কেবল পাকিস্তানের মাটিতে ২টিতে। সেই সিরিজ বাদ দিলে বাকি সব ম্যাচেই প্রতিপক্ষের লোয়ার-অর্ডার ও টেইলএন্ডার ব্যাটারদের কাছে ধরা খেয়েছে বোলাররা, যার শুরুটা হয়েছে গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে।

সিলেটে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে পেসারদের দাপটে ৫৭ রানের মধ্যে লঙ্কানদের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। ষষ্ঠ উইকেটে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের জোড়া শতকে ২০২ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস থামে ২৮০ রানে। অর্থাৎ, প্রতিপক্ষের শেষ ৫ উইকেট নিতে স্বাগতিক বোলাররা খরচ করেন ২২৩ রান।

এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা মেলে একই দৃশ্যের। ১২৬ রানে লঙ্কানরা ৬ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত তারা অলআউট হয় ৪১৮ রানে। এবারও দলকে বাঁচিয়ে জোড়া শতক হাঁকান ডি সিলভা ও মেন্ডিস। ১০৮ রান করা ডি সিলভা যখন সাজঘরে ফেরেন তখন লঙ্কানদের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ২৯৯ রান। এরপর টেইলএন্ডারদের নিয়ে আরও ১১৯ রান যোগ করেন ১৬৪ রান করা মেন্ডিস। শান্তর দল ম্যাচ হারে ৩২৮ রানে।

দুই সেঞ্চুরিতে ৩৬৭ রান করে সিরিজ সেরা হন কামিন্দু মেন্ডিসচট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শেষ টেস্টেও লঙ্কান লোয়ার-অর্ডার ও টেইলএন্ডারদের সামনে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। যদিওবা এই ম্যাচে শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাট করে সফরকারীরা। ৪১১ রানে ৬ উইকেট হারানো দলটির ইনিংস থামে ৫৩১ রানে। অর্থাৎ, শেষ ৪ উইকেটে তারা যোগ করে আরও ১২০ রান। টাইগাররা ম্যাচ হারে ১৯২ রানে।

অবশ্য আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ব্যাটার-বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ।

ভারতের বিপক্ষে নিজেদের পরের ম্যাচের শুরুতেও পেসাররা তাদের ঝলক দেখায়। চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ১৪৪ রানে স্বাগতিকদের ৬ উইকেট তুলে নেয় হাসান-নাহিদরা। কিন্তু এরপরই রবীন্দ্র জাদেজা ও রবীচন্দ্রন অশ্বিনের কাছে এক কথায় অসহায় আত্মসমর্পণ করেন বোলাররা। সপ্তম উইকেটে এই দুই ব্যাটার যোগ করেন ১৯৯ রান। শেষ পর্যন্ত ভারতের ইনিংস থামে ৩৭৬ রানে। আর ম্যাচের ফল? ২৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।

চেন্নাই টেস্টে হাসান মাহমুদের পেস তোপে প্রথম ১০ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়েছিল ভারতএই সিরিজের পর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল শান্তর দল। তবে অনভিজ্ঞ প্রোটিয়াদের কাছেও একই জায়গায় খেই হারায় স্বাগতিকরা। অক্টোবরে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে সফরকারীদের ৬ উইকেট তুলে নেয় তারা। কিন্তু মিরপুরের স্পিন সহায়ক পিচেও প্রোটিয়াদের লোয়ার-অর্ডার ও লেজ ভাঙতে পারেনি স্পিনাররা। সপ্তম উইকেটে উইয়ান মুল্ডারের সঙ্গে ১১৯ রানের জুটির পর নবম উইকেটে ডেইন পিটের সঙ্গে ৬৬ রানের আরেকটি জুটি গড়েন কাইল ভেরেইনা। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস থামে ৩০৮ রানে। আর টাইগারদের ম্যাচ হারতে হয় ৭ উইকেটে।

এরপর চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে তো শুরু থেকেই অনভিজ্ঞ প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইন-আপের কাছে নাস্তানাবুদ হতে থাকে বাংলাদেশের বোলাররা। ৪২৩ রানে প্রতিপক্ষের ৬ নম্বর উইকেটটি তুলে নেওয়ার পর আর কোনো উইকেটই নিতে পারেনি তারা। সাত নম্বর ব্যাটার মুল্ডার ও আটে নামা সেনুরান মুথুসামির ১৪৮ রানের জুটির পর দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ইনিংস ও ২৭৩ রানে।

প্রোটিয়াদের মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনই ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন তাইজুল। এরপর ইনিংসে আর তিনি কোনো উইকেটই পাননিবাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডার ও টেইলএন্ডারের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার সবশেষ উদাহরণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। মঙ্গলবার অ্যান্টিগায় শেষ হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬১ রানে ক্যারিবিয়ানদের ৭ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরেও স্বাগতিকদের তিনশর আগে থামাতে পারেনি তারা।

অষ্টম উইকেটে কেমার রোচকে নিয়ে জাস্টিন গ্রিভস গড়েন ১৪০ রানের জুটি। ডানহাতি এই ব্যাটার তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফরকারীরা ম্যাচ হারে ২০১ রানে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার নাম হলো ব্যাটাররা। কিন্তু তাদের ব্যর্থতার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে টেস্টে দ্রুত প্রতিপক্ষে লোয়ার-অর্ডার কিংবা টেইলএন্ডারদের উইকেট নিতে না পারার বিষয়টি। অন্যান্য দলগুলোতে শেষদিকের ব্যাটারদের উইকেট দ্রুত তুলে নেওয়ার ভূমিকাটা পালন করে থাকেন পেসাররা। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠলেও তারা শেষ পর্যন্ত ধরা খাচ্ছেন প্রতিপক্ষের লোয়ার-অর্ডার কিংবা টেইলএন্ডারদের কাছে।

মন্তব্য করুন: