জয়সোয়ালকে আউট দিয়ে আলোচনায় সৈকত

৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

জয়সোয়ালকে আউট দিয়ে আলোচনায় সৈকত

অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মেলবোর্ন টেস্টে শেষে আলোচনায় যশস্বী জয়সোয়ালকে তৃতীয় আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের আউট দেওয়ার সিদ্ধান্ত। মাঠের আম্পায়ার ভারতের এই ওপেনারকে প্রথমে আউট না দিলে অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নিলে পরবর্তীতে তাকে আউট ঘোষণা করেন সৈকত। ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত জন্ম দিয়েছে বেশ আলোচনায়। তবে বাংলাদেশের এই আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।

সোমবার সিরিজের চতুর্থ টেস্টের শেষ দিনে ভারত ইনিংসের ৭১তম ওভারের ঘটনা এটি। ভারতের শেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি হিসেবে ক্রিজে জয়সোয়ালের সঙ্গে ছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। প্যাট কামিন্সের ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে করা বাউন্সারে হুক করার চেষ্টা করেন ৮৪ রানে ব্যাট করা জয়সোয়াল। বল যায় উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। অস্ট্রেলিয়া আপিল করলেও মাঠের আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আউট দেননি। কামিন্স সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন।

রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাট ও গ্লাভসের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় বলের গতিপথ পরিবর্তন হয়। এ সময় সৈকত বলেন, “আমি গ্লাভসে লেগে বলের গতিপথ বদলাতে দেখতে পাচ্ছি। আমি স্পষ্টভাবে গ্লাভসের সঙ্গে স্পর্শ দেখতে পাচ্ছি।

তবে স্নিকো মিটারে কোনো ধরনের স্পর্শ ধরা পড়েনি। এভাবে কয়েকবার রিপ্লে দেখার পর বলের গতিপথ পরিবর্তন হওয়া নিয়ে নিশ্চিত থাকায় থার্ড আম্পায়ার সৈকত জয়সোয়ালকে আউট ঘোষণা করেন।

এটা দেখে স্পষ্টই মনে হচ্ছে, এখানে গতিপথ পাল্টেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি বলের সঙ্গে গ্লাভসের স্পর্শ হয়েছে। জোয়েল আপনাকে আপনার সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে। ব্যাটার আউট হয়েছে।

কামিন্সের বলে জয়সোয়াল পুল করার চেষ্টা করলে বল যায় উইকেটকিপারের হাতেজয়সোয়াল সাজঘরে ফেরার পর শেষ পর্যন্ত ভারতের অলআউট হয় ১৫৫ রানে। আর ম্যাচ হারে ১৮৪ রানে।

সিরিজের সম্প্রচারক চ্যানেল সেভেনের ধারাভাষ্যে থাকা সাবেক আম্পায়ার সাইমন টফেল সৈকতের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দেন। কীভাবে এটিকে আউট ঘোষণা করা হয়েছে তার ব্যাখ্যাও দেন টানা পাঁচ বছর আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরস্কার পাওয়া টফেল।

শেষ পর্যন্ত থার্ড আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। … যখন থার্ড আম্পায়ার স্পষ্টভাবে ব্যাটে লেগে বলের দিক পরিবর্তন দেখেন, তখন আর তা প্রমাণের জন্য কোনো অতিরিক্ত প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।"

এই বিশেষ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে তারা প্রযুক্তির দ্বিতীয় স্তর ব্যবহার করেছেন, যেটা কোনো একটি কারণে শব্দ দিয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি যে এটি ব্যাটে লেগেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ার সঠিক কাজ করেছেন।

ম্যাচ শেষে সৈকতের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। তার মতে, জয়সোয়ালের ব্যাট অথবা গ্লাভসের সঙ্গে বলের স্পর্শ হয়েছিল।

আমি জানি না এই প্রযুক্তি নিয়ে কি বলা উচিত কারণ এটা কোনো কিছুই দেখায়নি। তবে খালি চোখে দেখে মনে হয়েছে সে (জয়সোয়াল) কিছু একটা স্পর্শ করেছে। আমি জানি না, আম্পায়ার কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চান। তবে সত্যি বলতে আমার মনে হয়, সে বলটি স্পর্শ করেছে।

জয়সোয়ালের ব্যাট ও গ্লাভসের কাছ দিয়ে যাওয়ার পর বলের গতিপথঅস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংও সৈকতের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেন। চ্যানেল সেভেনের ধারাভাষ্যে তিনি বলেন, “তারা এটি নিয়ে যা খুশি বলতে পারে। বল স্পষ্টতই গ্লাভসে লেগেছিল। আমি তখনই এটি ধরেছিলাম। যশস্বী জয়সওয়াল আসলে হাঁটা শুরু করেছিল। তবে স্নিকো এটা সঠিক প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু আম্পায়ার বলের দিক পরিবর্তন ধরতে পেরেছিল এবং বলটি গ্লাভসের প্রান্তে থাকার মুহূর্তটিতে (রিপ্লে) থামিয়েছিল। আমার মতে, এতে কোনো বিতর্কের সুযোগই নেই।

তবে স্নিকো মিটারকে উপেক্ষা করায় তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ভারতের ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার।

আমরা অনেকবার দেখেছি যে ব্যাটের কিনারার খুব কাছাকাছি গিয়ে বল দেরিতে সুইং করে। এটা তো আমরা অনেকবার দেখেছি, তাই না? বল ব্যাটের কানায় লাগে না, কিন্তু সিমে আঘাত করার পরে সুইং করে। তখন দূর থেকে মনে হয় বলটি ব্যাটের কানায় লেগেছে। আমি ফরোয়ার্ড ডিফেন্সের কথা বলছি, এই হুক শটের কথা বলছি না।

দৃষ্টিগত বিভ্রান্তি বোঝায় যে এখানে ব্যাটের কানায় লেগেছে। এখানেও তেমনটাই হয়েছিল। যদি প্রযুক্তিগত প্রমাণ বলে যে এটি আউট নয়, তাহলে আপনি আউট দিতে পারবেন না।

মন্তব্য করুন: