শুধু ব্যাটার হিসেবে জায়গা না হওয়ায় দলে নেই সাকিব

১২ জানুয়ারি ২০২৫

শুধু ব্যাটার হিসেবে জায়গা না হওয়ায় দলে নেই সাকিব

বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় দ্বিতীয় দফায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে সাকিব আল হাসানের না থাকাটা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে ছাড়াই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাকে না নেওয়ার কারণ হিসেবে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানিয়েছেন, ব্যাটার হিসেবে জায়গা না থাকায় দলে নেই সাকিব।

গত সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে যাওয়া সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন আম্পায়াররা। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বার্মিংহ্যামে পরীক্ষা দিলেও সেখানে পাস করতে পারেননি সাকিব। ফলে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয় তার বোলিং। দ্বিতীয় দফায় চেন্নাইয়ে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। শনিবার রাতে বিসিবি জানায়, এখানেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ পড়ায় ২০০৬ সালের পর আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে সাকিবকে ছাড়াই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সে বছর জাতীয় দলে অভিষেকের পর ভারতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে মাঠে নামেন তিনি।

রোববার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার পর মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে লিপু জানান, অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করতে না পারায় সাকিবকে দলে রাখা সম্ভব হয়নি।

বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যে সমস্যায় আছেন সাকিব, সেটা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। দুঃখজনকভাবে ফলটা নেতিবাচক হওয়ায় তিনি একজন ব্যাটার হিসেবেই শুধু খেলতে পারবেন। দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তাই সাকিব আল হাসানের অবস্থানটা শুধু ব্যাটার হিসেবে ছিল আমাদের কাছে। এই দলে আসলে সমন্বয় সাজাতে গিয়ে তাকে এই ১৫ জনের মধ্যে আমরা জায়গা দিতে পারিনি।

দেশের হয়ে ওয়ানডেতে সাকিব সবশেষ মাঠে নামেন ২০২৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড-আউট হওয়ার ঘটনার সেই ম্যাচে বল হাতে ২ উইকেটের পর ব্যাট হাতে ৬৫ বলে ৮২ রান করে দলকে জিতিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তখনকার বাংলাদেশ অধিনায়ক। সেই ম্যাচ জিতেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচসেরা ইনিংস খেলে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট নিশ্চিত করেন সাকিব

এরপর দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হন সাকিব। তবে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পালাবদলের পর আর দেশে ফিরতে পারেনি তিনি। সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে হওয়া টেস্ট সিরিজের পর থেকে ছিলেন জাতীয় দলের বাইরেও। 

তবে সাকিবের দলে না থাকার বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের বাইরে কোনো আলোচনা না করে প্রধান নির্বাচক বলেন, “একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে নিয়ে কোন জায়গাটার জন্য তাকে দলে রাখা গেল না, এটা নিয়ে পাবলিকলি এত খোলামেলা আলোচনা করা খুব একটা ভালো কথা নয়। এই মুহূর্তে যারা দলে আছে, তারা এগিয়ে আছে। কারণ তারা আমাদের সঙ্গে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা খেলছে। তারা আস্থাশীল সেই কারণেই।

সাকিবের বিষয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট (ফারুক আহমেদ) বলেছিলেন, কেউ অবসর না নিলে দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অ্যাভেইলঅ্যাবল। বোলিং অ্যাকশনের বিষয়টা আসায় আমরা আর দ্বিতীয় প্রসঙ্গে (রাজনৈতিক সমস্যা) যাইনি। যে কারও ব্যাপারে আমরা কয়েক জায়গা থেকে ছাড়পত্র চাই। ফিটনেস বা কারও অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা।"

"যাদের দলে নিয়েছি, নামগুলো আগেই বোর্ডে জমা দিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনায় সাকিব না থাকার কারণেই সম্ভবত অন্য যে বিষয়টা (রাজনৈতিক সমস্যা), তা নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। যদি সে তালিকায় থাকত, তাহলে হয়তো আরও পরিষ্কারভাবে এটা আমি বলতে পারতাম। বোর্ড থেকেও হয়তো পরিষ্কার উত্তর নিতে পারতাম।

২৪৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৩৪ ইনিংসে সাকিব ৭ হাজার ৫৭০ রান করেছেন, গড় ৩৭ দশমিক ২৯। ৯টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৫৬টি ফিফটি। ২০২৩ সালে খেলা ২২ ইনিংসে ৩৫ গড়ে বাঁহাতি এই ব্যাটারের রান ৭৩৫। ৬টি ফিফটি হাঁকালেও নেই কোনো সেঞ্চুরি।

মন্তব্য করুন: