শৃঙ্খলা ফেরাতে ভারত দলে ১০ নির্দেশনা
১৭ জানুয়ারি ২০২৫
ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ হারের পর বেশ নড়েচড়ে বসেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। দলে শৃঙ্খলা, একতা এবং ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে দেশটির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই নির্দেশনা অমান্য করলে আইপিএলে নিষিদ্ধসহ কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো জানায়, ১০টি নির্দেশনার নথি বৃহস্পতিবার ক্রিকেটারদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এই নথি তারাও পেয়েছে।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় ভারত। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাঁচ ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে তারা হারে ৩-১ ব্যবধানে। দুই সিরিজেই মাঠের লড়াইয়ে একদমই ছন্নছাড়া ছিল রোহিত শর্মার দল।
নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে বাজে পারফরম্যান্সের মূল্যায়নের জন্য গত সপ্তাহন্তে আলোচনায় বসেছিলেন টেস্ট ও ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রোহিত, হেড কোচ গৌতম গম্ভীর, প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার এবং বিসিসিআই সচিব। তাদের পরামর্শক্রমে এই নির্দেশনা তৈরি করেছে বিসিসিআই।
এসব নির্দেশনায় জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশ গ্রহণ, সফরে পরিবারের সদস্যদের বেশি দিন সঙ্গে না রাখা, নিজের মতো করে অনুশীলন অথবা ম্যাচ ভেন্যুতে না যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনায় জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হতে এবং কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পেতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারবেন ক্রিকেটাররা। তবে সেটি হবে নির্বাচক কমিটির প্রধানের অনুমোদন সাপেক্ষে।
প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অনুশীলন সেশনের পুরোটা সময় দলের সঙ্গে থাকতে হবে। নিজের অনুশীলন শেষ হয়ে গেলে আগেভাগে চলে যেতে পারবেন না। ম্যাচ বা সিরিজ আগে আগে শেষ হলেও ক্রিকেটারদের দলের সঙ্গেই অবস্থান করতে হবে।
টিম হোটেল থেকে অনুশীলন বা ম্যাচ ভেন্যুতে যাতায়াত করতে হবে টিম বাসে। হোটেল থেকে মাঠে কিংবা মাঠ থেকে হোটেলে পরিবার নিয়ে আলাদাভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাওয়া যাবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে নির্বাচক কমিটির প্রধান ও প্রধান কোচের পূর্ব-অনুমোদন নিতে হবে।
বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছে বিসিসিআই। যে সফরগুলো ৪৫ দিন বা তার বেশি হবে, সেগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নেওয়া যাবে। তবে প্রতি সিরিজে কেবল একবারই নেওয়া যাবে এবং তারা সর্বোচ্চ ১৪ দিন অবস্থান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে খেলোয়াড় ও তার পরিবারের খরচ বিসিসিআই বহন করবে। পরিবারের সদস্যরা কখন আসবেন, সেটি কোচ, অধিনায়ক ও বোর্ডের মহাব্যবস্থাপকের (অপারেশনস) সঙ্গে আগেই আলোচনা করে নিতে হবে।
এছাড়াও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্টাফ যেমন, ম্যানেজার, রাঁধুনি, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করা হয়েছে।
ট্যুর বা সিরিজ চলাকালে কোনো খেলোয়াড় (ব্যক্তিগত) বিজ্ঞাপন কিংবা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তবে বিসিসিআইয়ের অফিশিয়াল শুটিং, প্রচারণামূলক কার্যক্রম ও অন্যান্য আয়োজনে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অংশ নিতে হবে।
সফরের সময়ের ওপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত লাগেজ বহনেও বিধি-নিষেধ দিয়েছে বিসিসিআই। এছাড়াও সিরিজ শুরুর আগে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত সেন্টার অব এক্সলেন্সে খেলোয়াড়দের ক্রীড়াসামগ্রী ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাঠাতে হবে ।
এসব নির্দেশনা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা প্রত্যেক ক্রিকেটারকে কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। নিয়ম অমান্য করলে বিসিসিআই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে আছে আইপিএলসহ বিসিসিআই পরিচালিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নিষিদ্ধ এবং বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে থাকা ম্যাচ ফি কর্তন।
মন্তব্য করুন: