বিপিএলের লিগ পর্বে ব্যাট হাতে বাংলাদেশিদের জয়জয়কার
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্দান্ত ছন্দে আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সে বিদেশি ক্রিকেটাদের ছাড়িয়ে আলো ছড়িয়ে সবার উপরে আছেন তানজিদ হাসান তামিম-তাসকিন আহমেদরা। তবে দেশীয় ক্রিকেটারদের নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছাড়াও এখানে অবদান আছে চলতি আসরে মানসম্মত বিদেশি ক্রিকেটার না থাকা।
শনিবার শেষ হয়েছে বিপিএলের একাদশ আসরের লিগ পর্বের লড়াই। সাত দল নিয়ে শুরু করা টুর্নামেন্টে প্লে-অফে উঠেছে ফরচুন বরিশাল, চিটাগং কিংস, রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইগার্স। আর এই পর্ব শেষে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক ও উইকেটশিকারির তালিকায় দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
এবারের আসরে ব্যাট হাতে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন তানজিদ। ঢাকা ক্যাপিটালসের এই ওপেনার লিগ পর্ব শেষ করেছেন সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক হিসেবে। ১২ ইনিংসে ৪৪ দশমিক ০৯ গড় এবং ১৪১ দশমিক ৩৯ স্ট্রাইক-রেটে বাঁহাতি এই ব্যাটার ৪৮৫ রান করেছেন। চার ফিফটির সঙ্গে হাঁকিয়েছেন একটি সেঞ্চুরিও। ৩৬ ছক্কা হাঁকিয়ে গড়েছেন এক আসরে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডও।
তবে মৌসুমের শুরুটা খুব একটা ভালো ছিল না তানজিদের। প্রথম ছয় ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তবে এরপর দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে রেকর্ড গড়া ম্যাচে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ২৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। ৬৪ বলে ৮ ছক্কা ও ৬ চারে করেন ১০৮ রান।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন খুলনার নাঈম শেখ। লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই ওপেনার ১২ ইনিংসে ১৪৮ স্ট্রাইক-রেটে রান করেছেন ৪৪৪, ফিফটি তিনটি ও সেঞ্চুরি একটি। দল প্লে-অফে ওঠায় তার সামনে সুযোগ আছে তানজিদকে সরিয়ে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক হওয়ারও।
তিনে থাকা এনামুল হক বিজয় আসর শেষ করেছেন ৩৯২ রান নিয়ে। ১২ ইনিংসে দুই ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে দুর্বার রাজশাহীর এই ব্যাটার ১৩০ দশমিক ৬৬ স্ট্রাইক-রেটে রানগুলো করেছেন।
তার পরের অবস্থানে আছেন টেস্ট দলের ওপেনার জাকির হাসান। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে বাঁহাতি এই ব্যাটার ১২ ইনিংসে ১৪০ দশমিক ৪৩ স্ট্রাইক-রেট ও তিন ফিফটিতে ৩৮৯ রান করে লিগ পর্ব শেষ করেছেন।
শীর্ষ পাঁচে থাকা একমাত্র বিদেশি ক্রিকেটার হলেন চিটাগং কিংসের গ্রাহাম ক্লার্ক। ১১ ইনিংসে ইংলিশ এই ব্যাটার একটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে মোট রান করেছেন ৩৭৭, স্ট্রাইক-রেট ১৫২।
এক আসরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডও হয়েছে এবারের বিপিএলে। এখন পর্যন্ত শতক হয়েছে আটটি। এর মধ্যে বাংলাদেশি ব্যাটাররা হাঁকিয়েছেন চারটি।
তবে দেশি ব্যাটারদের জয়জয়কারের আসরে হতাশার নাম মানসম্মত বিদেশি ব্যাটার কিংবা বোলার না থাকা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে এমন বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম ছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। কিন্তু পাকিস্তানের এই তারকা বাঁহাতি পেসার ফরচুন বরিশালের হয়ে পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলেননি। দলটির হয়ে ছয় ম্যাচ খেলেছেন দেশটির আরেক উঠতি পেসার জাহানদাদ খান। অন্যদিকে সিলেটের হয়ে সাত ম্যাচ খেললেও তেমন আলো ছড়াতে পারেননি ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা পেসার রিস টপলি।
এছাড়া বেশির ভাগ দলেরই বোলাররা ছিলেন মানহীন। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিতে এমনও বোলার খেলেছেন যারা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরেই ছিলেন দীর্ঘ সময়। যেমন রাজশাহীর মিগুয়েল কামিন্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসার নিজের সবশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেন ২০২২ সালের জুনে। তাকে দিয়ে এক ম্যাচ খেলায় রাজশাহী।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নামীদামি ব্যাটারদের কেউ না থাকায় কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই রান তুলে গেছেন দেশীয় ব্যাটাররা। ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেইলস ও ডাভিড মালান অংশ নিলেও তারা পুরো আসরে খেলেননি। এর মধ্যে রংপুরের হয়ে ৬ ম্যাচে হেইলস করেন ২১৮ রান। অন্যদিকে পুরো মৌসুমের জন্য বরিশালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকা মালান ৭ ম্যাচ খেলে করেছেন ২৮১ রান।
মন্তব্য করুন: