অস্ট্রেলিয়াকে স্পিন ফাঁদে ফেলতে গিয়ে ধরা খেল শ্রীলঙ্কাই

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অস্ট্রেলিয়াকে স্পিন ফাঁদে ফেলতে গিয়ে ধরা খেল শ্রীলঙ্কাই

অস্ট্রেলিয়াকে স্পিনের ফাঁদে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই সেই জালে ধরা খেয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে তো স্টিভ স্মিথের দুর্দান্ত নৈপুণ্য ছিলই। কিন্তু স্বাগতিকদের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ন্যাথান লায়ন ও ম্যাথিউ কুনেমানের ঘূর্ণি। প্রতিপক্ষের ৪০ উইকেটের ৩০টিই নিয়েছেন এই দুই স্পিনার।

রোববার গলে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের চতুর্থ দিন মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির আগেই ৯ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। এরই সঙ্গে ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় সফরকারীরা।

টেস্টে ঘরের মাঠে নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী পিচ বানিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে ক্রিকেট বিশ্বে। বিশেষ করে উপমহাদেশের ম্যাচগুলোয় দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজগুলোতে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে রাখা যেন নিয়ম হয়েই দাঁড়িয়েছে।

এই যেমন গত বছর সেপ্টেম্বরের ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার পথে বেশ ভালোভাবেই এগুতে শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই সিরিজে স্বাগতিক স্পিনারদের কাছে কিউইদের রীতিমত নাস্তানাবুদ হতে হয়। প্রতিপক্ষের ৪০ উইকেটের মাত্র ২টি নেয় পেসাররা। প্রথম টেস্ট ৬৩ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচ লঙ্কানরা জিতে নেয় ইনিংস ও ১৫৪ রানে।

তবে শেষ পর্যন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আর ওঠা হয়নি শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৬ সাল থেকে টেস্ট সিরিজ না হারা দলটি স্পিন সহায়ক পিচেই দুটো ম্যাচ খেলে। তবে এবার ভাগ্য যেন তাদের সহায় হয়নি। উল্টো লায়ন-কুনেমান স্পিন জুটির ঘূর্ণিতেই কুপোকাত লঙ্কানরা। অন্যদিকে দুই টেস্টে তিন ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কেবল ১৭টি উইকেট নিতে পারে স্বাগতিক বোলাররা।

ঘূর্ণি জাদুতে সিরিজে লঙ্কানদের ধসিয়ে দিয়ে মোট ৩০ উইকেট নেন কুনেমান-লায়ন জুটিসিরিজ জয়ের পথে লঙ্কান স্পিনারদের বিপক্ষে স্মিথ ও উসমান খাজাসহ অন্য ব্যাটারদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে অনেকটাই এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়াকে। সিরিজে সফরকারী ব্যাটারদের চার সেঞ্চুরি ও এক দ্বিশতকের বিপরীতে একটি সেঞ্চুরিও হাঁকাতে পারেনি স্বাগতিকরা। সব মিলিয়ে ব্যাট বলের দাপুটে লড়াইয়ে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশড করে স্মিথের দল।

সিরিজ শেষে লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা জানান, এখন থেকে ঘরের মাঠে নিজেদের সুবিধা মতো স্পিনিং পিচ বানিয়ে খেলার ব্যাপারে ভাবার সময় এসেছে।

এটা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে যে আমরা ব্যাটাররা স্পিন ভালো খেলতে পারছি কি না। আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে। যদি আপনি তাদের (অস্ট্রেলিয়া) খেলার ধরন দেখেন তাহলে দেখবেন তারা লেগ সাইডে ভালো খেলেছে। সঙ্গে এটাও বুঝেছে এই ধরনের পিচে রক্ষণাত্মক খেলা কঠিন। কিন্তু আমরা নিজেদের ক্ষেত্রে সেটা কাজে লাগাতে পারিনি।

আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে যে আমরা এই ধরনের পিচে খেলা চালিয়ে যাবো নাকি এমন পিচে খেলবো যেটা আমাদের জন্য সহায়ক হবে।

তবে ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের স্পিনে ধরাশায়ী হওয়া প্রথম দল শ্রীলঙ্কা নয়। এর আগে গত বছর ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেট বানিয়েও হোয়াইটওয়াশড হতে হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারতকে।

গত অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মিরপুরের সিরিজের প্রথম টেস্টে স্পিনিং কন্ডিশনে তারা ম্যাচ হারে কাগিসো রাবাদার পেস তোপে। এরপর চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পুরো ব্যাটিং লাইন-আপ আত্মসমর্পণ করে প্রোটিয়া স্পিনের কাছে।

মিরপুর টেস্টে বল হাতে ৯ উইকেট শিকার করেছিলেন রাবাদাএকই সময় ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের কাছে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয় ভারত। বেঙ্গালুরুতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে কিউই পেসারদের তোপে ম্যাচ হারে তারা। সিরিজে ফিরতে পরের দুই টেস্টের জন্য স্পিনিং পিচ বানায় স্বাগতিকরা। কিন্তু সেখানেও দাপট দেখাতে থাকে সফরকারী স্পিনাররাই। স্পিনিং কন্ডিশনে স্বাগতিক ব্যাটারদের চেয়েও সফল ছিল কিউইরা।

সেই সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আশা অনেকটাই ফিকে হতে শুরু করে ভারতের জন্য। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ হেরে তা একদমই শেষ হয়ে যায়।

মন্তব্য করুন: