চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
অধিনায়ক শান্তর ব্যাটেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরগুলো আসলেই বাংলাদেশের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে থাকে দলের ব্যাটিং। গত ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটারদের ব্যর্থতা দলকে ভুগিয়েছিল বেশ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগেও ব্যাটিং নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই টাইগাররা। তুলনামূলক অনভিজ্ঞ ব্যাটিং-অর্ডার নিয়ে এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া দল তাকিয়ে থাকবে নাজমুল হোসেন শান্তর দিকে। কারণ গত দুই বছরে দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার যে তিনিই।
আগামী বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ তাদের ব্যাটিং লাইন আপ সাজিয়েছে অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ পারফর্মাররা যেমন আছেন, তাদের সঙ্গে আছেন শান্ত, সৌম্য সরকার ও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ে নিজেকে প্রমাণ করে চলা মেহেদী হাসান মিরাজ।
এছাড়া দলে আছেন তানজিদ হাসান তামিম, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক ও পারভেজ হোসেন ইমনের মতো উদীয়মান ব্যাটাররা। এদের মধ্যে গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় জাকেরের। আর এখনও ওয়ানডেতে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন ইমন। তানজিদ ও হৃদয় ২০২৩ সাল থেকেই দলের নিয়মিত মুখ।
২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪১ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২৭৮ রান করেছেন ৩২ ম্যাচ খেলা শান্ত। এ সময় কমপক্ষে ৮০০ রান করেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৫ দশমিক ৬৪ গড়ও বাঁহাতি এই ব্যাটারের। শুধু তাই নয়, সেঞ্চুরি ও ফিফটি হাঁকানোর দিক দিয়ে তার আশেপাশে নেই কেউ। ৯টি ফিফটির সঙ্গে হাঁকিয়েছেন ৩টি সেঞ্চুরি, বাকি ব্যাটাররা মিলে সেঞ্চুরি করেছেন মোট ৪টি।
অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে ভালো করছেন শান্ত। এখন পর্যন্ত দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ১১ ম্যাচে তিনি করেছেন ৪৮৭ রান। ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংসটিও খেলেছেন অধিনায়ক হিসেবেই।
শান্তর পর ২০২৩ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন মুশফিক। ৩০ ইনিংসে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের রান ৯৮২। ৩৯ দশমিক ২৮ গড়ে এই রানগুলো করতে তিনি ফিফটি করেছেন ৭টি, সেঞ্চুরি একটি।
মুশফিকের পরের অবস্থানে থাকা হৃদয় ২৯ ইনিংসে রান করেছেন ৮৭৭। ৭টি ফিফটির দেখা পেলেও ডানহাতি এই ব্যাটারের নেই কোনো শতক। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতেও তিনি ছন্দে নেই।
চতুর্থ স্থানে আছেন ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় থাকা মিরাজ। ৩২ ইনিংসে ৪ ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে তার রান ৮৪৩। তবে গড় ও স্ট্রাইক-রেটের দিক দিয়ে শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকি ব্যাটারদের চেয়ে বেশ পিছিয়েই আছেন তিনি।
আর ২১ ইনিংসে ৮০৬ রান নিয়ে পাঁচ নম্বরে আছেন আইসিসির ওয়ানডে আসরগুলোতে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা মাহমুদউল্লাহ। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে এসেছে ৫টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি। ১১১ রানের ইনিংসটি তিনি খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার নাম হতে পারে ওপেনিং। দলের দুই ওপেনার তানজিদ ও সৌম্য ব্যাট হাতে শুরু পেলেও তা আর বড় করতে পারেন না।
২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ ইনিংসে ৩ ফিফটিতে তানজিদ রান করেছেন ৪১৩। এর মধ্যে এক অঙ্কের ঘরে বাঁহাতি এই ব্যাটার সাজঘরের পথ দেখেছেন আটবার। স্ট্রাইক-রেট ১০০ হলেও গড় মাত্র ২০ দশমিক ৬৫।
অন্যদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলে নতুন করে জীবন পাওয়া সৌম্য ১১ ইনিংসে রান করেছেন ৪৩০। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রানের ইনিংস খেলার পর থেকে যেন ঝিমিয়ে গেছেন। এরপর ফিফটি হাঁকিয়েছেন কেবল দুটি। কয়েকটি ম্যাচে ভালো শুরু পেলেও থেমেছেন ত্রিশের ঘরেই।
সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ব্যাটারদের মধ্যে মূল দায়িত্বটা নিতে হবে শান্তকেই। আর তাকে সহায়তার দায়িত্বে থাকতে হবে অন্য ব্যাটারদের। তবে ভালো শুরুটা এনে দিতে হবে ওপেনারদেরই।
মন্তব্য করুন: