মাঠে টস করার পর যেভাবে সিসিইউতে তামিম
২৪ মার্চ ২০২৫

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) শাইনপুকুরের বিপক্ষে অষ্টম রাউন্ডের ম্যাচে সোমবার সকালে টস করতে নেমেছিলেন মোহামেডান অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে বোলিং পাওয়ার পর ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু মাঠে আর ফিরতে পারেননি। দেশসেরা এই ওপেনারের শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে।
মোহামেডানের এক কর্মকর্তাকে তামিম জানান, তার হয়তো গ্যাসট্রিকের (আলসারের) সমস্যা হচ্ছে। এক সময় তা রূপ নেয় বুকের ব্যথায়। এমন অবস্থায় দলের ফিজিও ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালকে ফোন করে জানান, তারা তামিমকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অধিনায়ককে ছাড়াই ম্যাচ খেলতে নেমে পড়ে মোহামেডান।
মাঠে আগে থেকেই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা ছিল। তবে এটিসহ তামিম তার নিজের গাড়িতে করে দলের ট্রেইনার ও বিকেএসপির চিকিৎসকসহ কাছের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে যান। সেখানে ইসিজিসহ আরও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয় তামিমের। কিন্তু তখনও জানা যায়নি আসলে তার কী হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকায় একটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয় এবং তামিমকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তথা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। তামিম চেয়েছিলেন ঢাকায় গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে।
হেলিপ্টারে ওঠার জন্য হাসপাতাল থেকে আবারও বিকেএসপিতে ফিরে আসেন তামিম। তবে এবার অ্যাম্বুলেন্সে করে। কিন্তু এরই মাঝেই যা বিপদ হওয়ার তা ঘটে গেল। দেবব্রতর ভাষ্য অনুযায়ী, হেলিকপ্টারে নেওয়ার জন্য তামিমকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময় তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল ফেনা। কারো ডাকেই কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। বিকেএসপির চিকিৎসক কোনো পালস পাচ্ছিলেন না। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করতে হবে।
সময়টিও ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে তামিমকে সিপিআর (বুকে চাপ দিয়ে কৃত্তিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা) দিতে শুরু করেন মোহামেডান ট্রেইনার। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় উপস্থিত সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, হেলিকপ্টারে করে ঢাকাতে নয়, বরং কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালেই আবার নেওয়া হবে তামিমকে। এই সিদ্ধান্তেই হয়তো বেঁচে যান দেশসেরা ওপেনার।
বিকেএসপি থেকে হাসপাতালে যাত্রাপথে পুরো রাস্তায় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের অবস্থা তখন বেশ সংকটাপন্ন ছিল। এরই মাঝে খবর পৌঁছে গেছে বিসিবিতেও। বাতিল করা হয় বোর্ডের নির্ধারিত ১৯তম সাধারণ সভা। হাসপাতালেও খবর দেওয়া হয় আগেই। সে অনুযায়ী ডাক্তাররাও আগে থেকেই নিচে অপেক্ষা করছিলেন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য।
হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে তামিমকে দেওয়া হয় লাইফ সাপোর্ট। তার শরীরের অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ার পর প্রথমে অ্যানজিওগ্রাম করা হয়। সেখানে হার্টের একটি অংশ ব্লক ধরা পড়ায় অ্যানজিওপ্লাস্টি করে হার্টে রিং বা স্টেন্ট বসানো হয়।
দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের মেডিকেল পরিচালক জানান তামিমের হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। অবশ্য এর আগেই বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী হাসপাতাল সূত্রে জানান, তামিমের দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
বিকেলে তামিমকে নিয়ে সুসংবাদ দেন দেবাশীষ। জ্ঞান ফিরেছে দেশসেরা ওপেনারের। কথা বলেছেন পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে। আপাতত তাকে সিসিইউতে ৪৮ ঘণ্টার জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যার মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন: