অর্থলোপাটসহ ৩ অভিযোগে বিসিবিতে দুদকের অভিযান
১৫ এপ্রিল ২০২৫

বিপিএলে টিকিট বিক্রির অর্থের অসঙ্গতিসহ মোট তিনটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে এই অভিযান চালিয়েছে দুদকের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।
যে তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিসিবিতে দুদকের প্রতিনিধি দল অভিযানে যায় সেগুলো হলো – বিপিএলের তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত টিকিট বিক্রির আয়ে অসঙ্গতি, বিসিবির আয়োজনে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে অর্থ আত্মসাৎ এবং তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটে এন্ট্রি ফিতে অনিয়ম।
এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তারা বিসিবির কাছে তথ্য জানতে চেয়েছে। অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ২০২০-২১ সালে মুজিব শতবর্ষ আয়োজনে কনসার্টসহ সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকার খরচ দেখানো হয়। কিন্তু তাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, পুরো আয়োজনে মোট খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মতো। ফলে প্রায় ১৯ কোটি টাকার কোনো হিসাব নেই। এছাড়াও টিকেট বিক্রির ২ কোটি টাকারও কোনো হিসাব দেখানো হয়নি। সব মিলিয়ে গড়মিলের হিসাব আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়ে বিসিবির অর্থ বিভাগের কাছ থেকে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিপিএলের সবশেষ আসরে টিকিট বিক্রি থেকে সব মিলিয়ে ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় হয়েছিল বলে জানান বিসিবি সভাপতি ও টুর্নামেন্টের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ। একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রথম ১০ আসরের টিকিট বিক্রি থেকে কেবল ১৫ কোটি টাকা পেয়েছিল বিসিবি।
দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে টিকিট বিক্রির আয়ে এই অস্বাভাবিকতা নিয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক বলেন, “আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে টিকেটের ব্যাপারে চুক্তি করা হতো। তারা টিকেট বিক্রি করে বিসিবিকে একটা অংশ দিত। গত ৩-৪ আসরে বিসিবি নিজ থেকে টিকেট বিক্রি করছে। যার প্রেক্ষিতে একাদশ আসরে আমরা দেখেছি, ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আট বছরে যেখানে ১৫ কোটি, এক বছরেই ১৩ কোটি। রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি। বিস্তারিত যাচাই করলেই বোঝা যাবে কী অসঙ্গতি এখানে।”
অন্যদিকে নাজমুল হাসান পাপনের আমলে ২০১৪-১৫ মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে অংশগ্রহণ ফি এক লাফে ৭৫ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছিল। ফলে ক্রমেই প্রতিযোগিতা থেকে কমতে থাকে অংশগ্রহণকারী দল সংখ্যা। এবারের আসরে এন্ট্রি ফি কমিয়ে ১ লাখ টাকা করায় ৬০টি দল অংশ নিয়েছে।
এ বিষয়ে আল আমিন জানান, আগে কোনো কারণে সর্বোচ্চ ৪ দলের লিগ হতো। এবার দল বেড়ে ৬০টি হয়েছে। তৎকালীন বোর্ডের কিংবা কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কোনো প্রভাব ছিল কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে তারা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তদন্তের বিষয়ে দুদককে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, এসবের ব্যাপারে আমাদের কাছে যত কাগজপত্র আছে, সব বিভাগকে সেগুলো দুদকের কাছে দিয়ে সহযোগিতার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। এখন যেহেতু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তাই এর বেশি কিছু বলা উচিত হবে না।”
মন্তব্য করুন: