স্মৃতিগুলোর জন্য ধন্যবাদ তামিম!
৬ জুলাই ২০২৩
যেতে নাহি দিব। হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়……
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম ইকবাল। আচমকা নিজের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে অবশেষে তামিম। চোখভরা জল আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে ক্রিকেটীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানালেন। লাল-সবুজের জার্সিকে বিদায় জানালেন চিরদিনের মত। না করা সকল প্রশ্নের উত্তর দিলেন। আচমকা এমন সিদ্ধান্তে কষ্টে ভাসালেন সমর্থকদের। ক্রিকেট ঈশ্বরও হয়ত কিছুটা চমকে উঠেছিলেন তখন।
সাগরিকার আবহাওয়া হয়তো ঘরের ছেলের মনোভাব আগেই টের পেয়েছিল। নিজ জন্মভূমির আবহাওয়া তাই আগেই শোকের মাতম করছিল যেন।
২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তামিমের। একই বছর অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টিতে। আর টেস্টে অভিষেক ২০০৮ সালে। এরপর মিরপুর, চট্টগ্ৰাম, পোর্ট অব স্পেন থেকে লর্ডসে তামিম খেলেন ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত কিছু ইনিংস। হয়ে যান বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার। স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান তাঁর।
বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজার রান করতে পারেন এটি একটা সময় পর্যন্ত কল্পনা ছিল। কিন্তু সেই কল্পনাকেও বাস্তব করেন তামিম। ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে দেশের একমাত্র ১৫ হাজার রানের মাইলফলক তামিমের একার। সর্বমোট ১৫,২০৫ রান তাঁর।
১৬ বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন তামিম। বাংলাদেশের জার্সিটা তুলে রাখলেন আজীবনের জন্য। সিদ্ধান্তটা সহজ ছিলনা। তাইত বার বার কান্না লুকিয়ে কথা বলার চেষ্টা তাঁর। থেমে গিয়েছিলেন কয়েকবার। শক্তি জুগিয়েছেন; আবারও কথা বলেছেন। ব্যক্ত করেছেন ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিবেদন। বলেছেন ‘আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
তামিমের ক্রিকেটীয় নিবেদন বা ডেডিকেশন নিয়ে সন্দেহের কারণ ছিলনা। যদিও ইনজুরি নিয়ে সমালোচনা ছিল কিন্তু ডেডিকেশন মনে রাখারও কারণ ছিল অনেক। এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে সেই ম্যাচটির কথা মনে আছে সবার। সেই ছবিটি মনের দৃশ্যপটে এখন সজীব। সব উইকেট শেষ প্রায়। কিন্তু অপরপাশে মুশফিক দাঁড়িয়ে। রান পাচ্ছেন কিন্তু উইকেট নেই। ম্যাচের শুরুতে ব্যাটিং করতে গিয়ে হাতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। কিন্তু দলের প্রয়োজনে সেই চোট নিয়ে আবারও মাঠে আসলেন। একহাতে ব্যাট করে উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে দেন মুশফিককে। আরও কিছু রান করে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের পথ সহজ করেন তামিম।
বাংলাদেশের অধিনায়ক হবার পর থেকেই ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে সর্বোচ্চ সফলতার স্বপ্ন দেখেন তামিম। বলেন এবার শিরোপা জিততে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। শুধু খেলতে বা কয়েকটা ম্যাচ জিততে নয়; বরং বিশ্বকাপ জিততে যাবে বাংলাদেশ দল।
এমন স্বপ্ন দেখা অধিনায়কের হঠাৎ এভাবে বিদায় বলা অনেক না বলা কথার জন্ম দেয়। তামিমের সেই না বলা কথাতে কি ছিল আসলে? তিনি কি নিজের মাঝে কল্পনা করেছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপের অধিনায়ক পঞ্চপাণ্ডবের মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। মাশরাফি সেই টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারেননি। টুর্নামেন্ট শেষে আলোচনাও হয়েছিল এটা নিয়ে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তামিম হয়ত ভেবেছিলেন দলের ব্যর্থতা হয়তো তাঁর দিকে চাপিয়ে দেয়া হবে। আবারও রোষানলে পড়বেন তিনি। বোর্ড বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। বিসিবি প্রেসিডেন্ট তাঁর বিপক্ষে কড়া কথা বলছেন মিডিয়ায়। কোচের প্রত্যাশাও হয়ত চাপে ফেলেছিল তাঁকে।
অভিমানী মনে অনেক কিছুই জমা রেখেছেন তামিম। বলতে চেয়েছিলেন অনেক না বলা কথা। কিন্তু বারবার গলা ধরে আসছিল তাঁর। বিদায়ের গ্লানিটা ধরে বসেছিল তাঁকে। হয়ত ২০২৩ বিশ্বকাপে লাল সবুজের প্রতিনিধিত্ব না করার আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ ছিল সেটি। কিংবা হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের পর শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে না পারার অপূর্ণ আশাটা কাঁদাচ্ছিল তাঁকে। কে জানে!
সেসব ছাপিয়ে সত্য এখন কেবলই বিদায়টা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না এই বাঁহাতিকে। বিদায় তামিম ইকবাল খান! বাংলাদেশের জার্সিতে স্মৃতিগুলোর জন্য ধন্যবাদ!
মন্তব্য করুন: