রাজনীতিতে আসার পর কিছুই হয়নি - মাশরাফি
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
নোমান মোহাম্মদ: আপনার কাছে ৫১০ কোটি টাকা আছে – এটা প্রথম জানলেন কিভাবে?
মাশরাফি: বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। দুর্ভাগ্যক্রমে এখন বলতে হচ্ছে। আমার পিএস আমাকে বলল, ‘শীর্ষ ১০ ক্রিকেটার আয়ের একটি খবর প্রচার হচ্ছে; আপনার নামও আছে। ৫১০ কোটি টাকার মালিক আপনি।’ শুনে আমি মজার সুরেই বললাম, ‘২-৩ বছর ধরে ক্রিকেট থেকে দূরে, তাও শীর্ষে তো আছি।’ ক্রিকেটারদের নিয়ে বিভিন্ন সময় এসব কথাবার্তা ওঠে। প্রথমে আমি এড়িয়ে গিয়েছিলাম বিষয়টা। কিন্ত দেখলাম, জিনিসটা নিয়ে অন্য ভাবে আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এখন যেহেতু আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত, তাই একটা বিবৃতি দিয়ে বললাম, যদি এ রকম হয় তাহলে যারা বলছে এসব, তাদের দায়িত্ব নেয়া উচিত এই বক্তব্যের। এটাই আমার প্রতিক্রিয়া, আর কী!
নোমান মোহাম্মদ: কোন কারণে আপনি শকড? ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ করেছে সেজন্য? নাকি বাংলাদেশি গণমাধ্যম আপনার থেকে কোন রকম যাচাই ছাড়াই সংবাদ প্রচার করেছে সেজন্য?
মাশরাফি: শকড হয়েছি আসলে বিভিন্ন কারণে। ভারতীয় গণমাধ্যম আগেও বিভিন্ন খবর প্রচার করেছে। কিন্ত আমার দেশের সাংবাদিকদের কাছে তো আমি সবসময় এভেইলেবল থাকি। তারা ক্রস চেক করে নিতে পারতেন কিন্ত করেননি। তাই তাঁদের কী চান, সেটা আমার কাছে স্পষ্ট না। এখানে সাকিব, মুশফিক, রিয়াদেরও নাম আছে। কিন্ত ওরা যেহেতু শুধু খেলোয়াড়, তাই হয়তো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আমি যেহেতু এখন রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি আর ব্যাপারটা অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল, তাই আমার একটা বিবৃতি দেয়ার দরকার ছিল।
ক্রিকেটই আমার আয়ের একমাত্র উৎস; আর কোনও আয়ের উৎস নেই
নোমান মোহাম্মদ: আপনি বারবার বলছেন, অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আপনার কি ধারণা, এই বিষয়টাকেই রাজনৈতিক দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে?
মাশরাফি: এটা তো যে কেউ বুঝতে পারে কোন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল। নির্বাচনের সময় হলফনামা দেয়া হয়েছে। সেখানে আমার সব কিছুর হিসাব আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি পরবর্তীতে আবার সুযোগ দেন, তাহলে আগামী হলফনামায় তো সবাই দেখতে পারবেন, কতটুকু কী বেড়েছে আমার। আর যদি সুযোগ না আসে, তাহলেও সাংবাদিকরা খুঁজে বের করতে পারবেন তথ্য-প্রমাণ সহ। কিন্ত প্রমাণ ছাড়া কিছু বলা তো ঠিক না।
নোমান মোহাম্মদ: জানতে ইচ্ছা করছে, কত টাকা আছে আপনার?
মাশরাফি: আমি ও আমার পরিবার চলার মত যথেষ্ট আছে। বাড়ি আছে, গাড়ি আছে; একের অধিকই আছে। ক্রিকেট খেলেই সব হয়েছে, রাজনীতিতে আসার পর কিছুই হয়নি। কিন্তু ব্যাপারটা এমনভাবে ছড়ানো হয়েছে যা আসলে অবিশ্বাস্য। আমি যা কিছু করেছি, ক্রিকেট খেলেই করেছি।
নোমান মোহাম্মদ: সত্যি যদি আপনার কাছে ৫১০ কোটি টাকা থাকত, কী করতেন?
মাশরাফি: আমি এমন একটি পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে কখনও অভাব ছিল না। তাই এত টাকার স্বপ্নও দেখিনি কোনোদিন। ক্রিকেট খেলেছি এটা আমার কাছে নেশা; সেই সঙ্গে পেশাও। ক্রিকেটই আমার আয়ের একমাত্র উৎস; আর কোনও আয়ের উৎস নেই।
নোমান মোহাম্মদ: গণমাধ্যমে যখন এই খবরটি আসে আপনি খুব শকড ছিলেন। আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা আছে?
মাশরাফি: সত্যি বলতে কী, আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন উকিল নোটিশ পাঠানোর জন্য। এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। আমার কোনও ভয় নেই। তাই সব মিলিয়ে এবার আইনি লড়াইয়ে যেতে চাচ্ছি।
আমাকে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করল যারা, তাদের বলব, অন্য কারো ক্ষেত্রে এটা না করার অনুরোধ থাকল। বারবার যেহেতু এমন হচ্ছে, আমি আইনি লড়াইয়ে যাব। আমার কোনো জুজুর ভয় নেই
নোমান মোহাম্মদ: ভারতীয় গণমাধ্যমসহ আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুেলো সংবাদটি সরিয়ে ফেলেছে। সে ক্ষেত্রে আপনার কি মনে হয়?
মাশরাফি: একটা খবর প্রচারিত হবার পর যত মানুষ জানে, সেটি সরিয়ে ফেললেও মানুষ তা দেখে না। যা একবার দেখেছে সেটিই মনে রাখে। আমি কখনো টাকার সাথে সমঝোতা করিনি। এখন তো বয়স হয়ে গেছে। কিন্ত ২৩-২৪ বছর বয়সের সময় আইসিএলে ৮ কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছিল যখন, তখনও আমি সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। অনেকে সেখানে গিয়েছিল, কিন্ত আমি যাইনি। দেশের প্রতি আমার একটা আবেগ আছে। সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই জায়গাটায় এনেছেন। আমি সবসময় সব কাজ করার আগে নিজের সম্মান, দলের সম্মানের কথা চিন্তা করি। ২৩-২৪ বছর বয়সে অত লোভনীয় প্রস্তাব ছেড়ে দিয়েছি। আর এখন তো বয়স ৩৯ বছর, আমার সব কিছু আছে। এখন এসবের প্রশ্নই আসে না। তাই বলব, তথ্য প্রমাণ নিয়ে খবর প্রচার করেন। যদি কেউ অন্যায় করে, সেটা নিয়ে করেন। কারণ আপনাদের কাজই এটা। আমার পরিবার আছে, আমি একটা রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। সেই ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্বও আমার।
নোমান মোহাম্মদ: এই খবরটার জন্য আপনার ক্ষতি কতটুকু হয়েছে বলে মনে করেন?
মাশরাফি: ক্ষতি বলতে কিছু হয়নি। যা হয়েছে, মানসিক ক্ষতি। কারণ এটা একটা লজ্জার ব্যাপার। আমি নিজের কাছে নিজে লজ্জা পেয়েছি। আমার ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে আমার লজ্জা লাগে। টাকার প্রয়োজন সবার আছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্ত আমি সব সময় সঠিক পথে চলতে চেয়েছি। অন্য পথে পা বাড়াইনি। অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন, সেটা তো আমি থামাতে পারব না। তবে আমাকে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করল যারা, তাদের বলব, অন্য কারো ক্ষেত্রে এটা না করার অনুরোধ থাকল। বারবার যেহেতু এমন হচ্ছে, আমি আইনি লড়াইয়ে যাব। আমার কোনো জুজুর ভয় নেই।
নোমান মোহাম্মদ: আপনার কথা অনুযায়ী, খবরটার মাধ্যমে এটাই প্রচার করতে চেয়েছে যে, মাশরাফি রাজনীতিতে যুক্ত হবার পর ৫১০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাই তো?
মাশরাফি: খবরটা ছিল শীর্ষ ধনী ক্রিকেটারদের। আমার পরে সাকিব, মুশফিক, রিয়াদের নামও ছিল। যেহেতু আমি একটা রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত আছি এবং আমার নির্বাচনী হলফনামার সাথে এর কোনও মিল নেই, তাই আমি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি। ক্রিকেট খেলে কেউ যদি হাজার কোটি টাকা ইনকাম করে তাতেও তো সমস্যার কিছু নেই। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, তাই বিষয়টা অন্য দিকে যাচ্ছিল। এসব খবর প্রচারের আগে আরও দায়িত্ববোধ নিয়ে করা উচিত।
মন্তব্য করুন: