আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব না : পাপন
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বাংলাদেশে ক্রিকেট সব সময়ই আলোচনায়। জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ, ক্রিকেট বোর্ড, পঞ্চপাণ্ডব, বিপিএল, পিচ - বিষয়ের কী অভাব? আবার ধরুন, বিশ্বকাপ নিয়ে বোর্ডের ভাবনা কী? বিপিএলের যাচ্ছেতাই অবস্থা কেন? জাতীয় দলের হেড কোচ হতে যাচ্ছেন কে? স্টেডিয়াম সংখ্যা কি বাড়ানো হবে? এসব নানা প্রসঙ্গে নোমান মোহাম্মদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন।
নোমান মোহাম্মদ: ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে আাপনি বিসিবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন। এই ১০ বছরে নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? সফল, ব্যর্থ নাকি মাঝামাঝি?
নাজমুল হাসান পাপন: এটা নির্ভর করছে আপনি কিসের সাথে তুলনা করছেন। একেক ক্ষেত্রে একেক রকম। আগের কোন সময়ের সাথে তুলনা করলে আমি বলব, অনেক ভালো। আমরা যখন দায়িত্বে আসি, তখন ওয়ানডে ছিল মূল ফরম্যাট। টেস্ট সব সময় গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও অনেক দেশেরই এই ফরম্যাটে খেলার আগ্রহ ছিল কম। এরপরই এল টি-টোয়েন্টি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সে সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলেও (আইসিসি) এই ফরম্যাট নিয়ে অনেক বিতর্ক চলত যে, এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো না খারাপ। সে সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল ওয়ানডে জেতা। শুধু ম্যাচ না, সিরিজ জিততে হবে। আগে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতলে সেটিকে অঘটন বলা হত। কিন্তু যখন আপনি সিরিজ জিতবেন এবং একের পর এক জিততে থাকবেন, তখন সেটিকে আর অঘটন বলতে পারবেন না।
নোমান মোহাম্মদ: ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। একই বছর ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। এরপর টেস্টেও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। শ্রীলংকার গিয়ে ওদের বিপক্ষেও জয় পেয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের সাফল্যের ওই সময়ের ৫ বছর পর এসে এখন দেশের ক্রিকেট কি একই ধারায় রয়েছে?
নাজমুল হাসান পাপন: আমার মতে, এখন সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। আগেই বললাম, আমরা মূলত ওয়ানডেতে মনোযোগ দিয়েছি। এবং ভালো ফল পেয়েছি। আমি যখন বোর্ডে আসি, তখন নিয়ম ছিল র্যাংকিংয়ের প্রথম ৮ দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। বাকিদের কোয়ালিফাই করে আসতে হবে। আমরা তখন র্যাঙ্কিংয়ে ৭-এ চলে আসি। শ্রীলংকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলকে বাছাইপর্ব খেলে আসতে হয়েছে। কিন্তু এরপর আমাদের অবস্থান যখন শক্ত হল, নিয়ম তখনই বদলে গেল। এখন কে কোন র্যাঙ্কিংয়ে আছে, তার বদলে শেষ এক বছর বিবেচনায় বাছাইয়ের নিয়ম এল।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি এখানে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের কথা বলছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ দিয়ে অনেক কিছু বিবেচনা হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে; ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল। কিন্তু ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ আমাদের একটা মহা বিপর্যয় হল। এখানে উন্নতির দিকটা কোথায়?
নাজমুল হাসান পাপন: ২০১৯ বিশ্বকাপকে আমি মহা বিপর্যয় বলব না। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছি। শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলাটা হয়নি। আমরা খারাপভাবে হেরেছি শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
নোমান মোহাম্মদ: কিন্তু প্রত্যাশা তো ছিল আরও বেশি।
নাজমুল হাসান পাপন: প্রত্যাশা কেমন ছিল জানি না। তবে যাদের সাথে হেরেছি তারা অনেক ভালো খেলেছে। হ্যাঁ, সুযোগ ছিল কিন্তু সঠিক ব্যবহার করতে পারিনি আমরা। এছাড়া সেই বিশ্বকাপে সাকিব ছাড়া আর কেউই তেমন পারফর্ম করতে পারেনি।
নোমান মোহাম্মদ: ক্রিকেটারদের সাথে আপনার সম্পর্ক বরাবরই ভালো দেখেছি। কিন্তু গত বছরখানেক সময়ে সেই সম্পর্কে কোনো ফাটল কি তৈরি হয়েছে? আপনার উপলব্ধি কী?
নাজমুল হাসান পাপন: শেষ এক বছর বলে না, আমারও ধারণা ছিল, আমার সাথে সবার ভালো সম্পর্ক। শুরু থেকেই মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ এদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে আলাপ না করে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতাম না। এছাড়াও কয়েকজনের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। মিরাজ, মুস্তাফিজ, তাসকিন, লিটন; এমনকি দলে নেই এমন অনেকের সাথেই কথা হয় আমার। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি, রিয়াদ যখন টেস্ট অবসর নেয়। সেটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল। সে সময় আমি সবাইকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম যে, কে কোন ফরম্যাট খেলতে চায় খেলতে পারে। তখন রিয়াদ বলেছিল, সে টেস্ট খেলতে চায়। আমার মতে সে টি-টোয়েন্টি থেকে টেস্টে বেশি কার্যকরী। কিন্তু যখন সিরিজের মধ্যে হুট করে আমাকে না জানিয়েই সে অবসরের ঘোষণা দিল, তখন অনেকটাই অবাক হয়েছি। শুরুতেই এজন্যই বললাম আমিও ভাবতাম যে, সম্পর্ক ভালো! কিন্তু তখন মনে হল, আমি যা ভাবি সবসময় তা ঠিক হবে এমনও না।
নোমান মোহাম্মদ: রিয়াদ টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০২১ সালের জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ চলাকালীন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নভেম্বরে। এই যে চার মাস সময়, সেখানে কি আপনার অনুমোদন পায়নি বলে মিডিয়াকে জানাতে পারেননি?
এটা ও (রিয়াদ) ভালো বলতে পারবে। আমরা সব খেলোয়াড়দের ভালোভাবে বিদায় দিতে চাই। মাশরাফিকে থেকে শুরু করে সবাইকেই। আমরা মাশরাফিকে ডেকে বলেছিলাম আমরা একটা সিরিজ আয়োজন করি তাঁর বিদায়ের জন্য। কিন্তু সে এমনটা চায় না। মিডিয়াতেও এটা বলেছে। ওরা (মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ) বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব কিছু। কিন্তু তামিম নিজ ইচ্ছায় টি টোয়েন্টি ছেড়ে দিল, এদিকে মুশফিকও তাই করল।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি তামিমকে মিথ্যাবাদী বলেছিলেন।
নাজমুল হাসান পাপন: কখনোই না।
নোমান মোহাম্মদ: কিন্তু পত্রিকায় তো নিউজ হয়েছে। আপনি তো প্রতিবাদপত্র পাঠাননি করেননি।
নাজমুল হাসান পাপন: প্রতিবাদ জানানোর তো কিছু নেই। আপনি দেখেন সেখানে কী লিখেছে। হেডলাইনটা কী আর ভেতরে কী! আমি নিজে তামিমকে দেখিয়েছি এবং বলেছি পড়ে দেখতে।
নোমান মোহাম্মদ: এটার জন্য তখন বা এখন তামিমের সাথে আপনার সম্পর্কে কি কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে?
নাজমুল হাসান পাপন: না। তখন বা এখন কখনই কিছু হয়নি।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি এই যে ১০ বছর ধরে বিসিবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিসেবে আছেন, আরেকটি নতুন খেলার উপযোগী স্টেডিয়ামে কিন্তু আমরা এখনও যেতে পারিনি। বিভাগীয় শহরগুলোতেও এখনও একাডেমি হয়নি। এটাকে কি আপনি ব্যর্থতা হিসেবে মনে করেন?
নাজমুল হাসান পাপন: মোটেই না। প্রথম কথা, আমরা বাইরে যেকোনো জায়গায় স্টেডিয়াম করতেই পারি। কিন্তু আমার দরকার ঢাকায়, যে জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংকট। ঢাকায় মিরপুরে ছাড়া খেলানোর কোনো জায়গা নেই। অন্য যেটি হচ্ছে সেটি ফতুল্লা। সেখানে ভেতরে খেলা চললেও বাইরে যে অবস্থা, ওখানে আন্তর্জাতিক খেলা সম্ভব না।
নোমান মোহাম্মদ: পূর্বাচলের স্টেডিয়ামে আমরা কবে নাগাদ খেলতে পারব?
নাজমুল হাসান পাপন: ডিজাইন মাত্র অনুমোদন পেয়েছে। মার্চে আমরা আন্তর্জাতিক টেন্ডার করব। সেখানে খেলার জন্য এখনও আড়াই বছর অপেক্ষা করতে হবে।
নোমান মোহাম্মদ: পূর্বাচলে কি আরেকটি স্টেডিয়াম নেয়ার কথা চলছে? স্থানীয় এক পত্রিকায় দেখেছি যে বিসিবি সেখানে জমি খুঁজছে।
নাজমুল হাসান পাপন: আমরা ঢাকার আশেপাশে বা ঢাকায় জমি খুঁজছি। কিন্তু সেটা শুধু লিগ খেলার জন্য। সেটি কোনো স্টেডিয়াম হবে না; শুধু খেলা হবে।
নোমান মোহাম্মদ: আপনার বা বিসিবির জন্য স্টেডিয়ামের জমি কিনতে টাকা তো কোনো বাধা না, তাই না? বিসিবির কাছে ৯০০ কোটি টাকা আছে বলেছিলেন। এখন কি ১০০০ কোটি হয়েছে?
নাজমুল হাসান পাপন: বেশিও থাকতে পারে!
নোমান মোহাম্মদ: কিন্তু টাকা তো শুধু পড়ে থাকলে হবেনা। এই টাকা দিয়ে স্থায়ী কোনো কিছু করে যেতে পারেন কিনা?
নাজমুল হাসান পাপন: আমরা এখন নিজেরা মাঠ কিনছি। বোর্ড চাচ্ছে ঢাকায় অন্তত ২টা কেনার কথা। আমি বলেছি, আপাতত একটা কেনার কথা। এছাড়াও ঢাকার বাইরে ৩টা কেনার কথা বলেছি। আগামীতে দেশে ৪-৫টা মাঠ হয়ে যাবে আমাদের। পূর্বাচলের এই স্টেডিয়ামটা করতে ৮০০-৯০০ কোটি লেগে যাবে। এটি একটি বিশ্বমানের স্টেডিয়াম হবে।
নোমান মোহাম্মদ: কোচিং স্টাফ প্রসঙ্গে যদি বলি, এখন কোন দিকে এগুতে চাচ্ছেন আপনারা? চন্ডিকা হাতুরাসিংহে খুব কড়া কোচ ছিলেন বলে এক ধরনের অভিযোগ ছিল সবার। অন্য দিকে স্টিভ রোডস নরম কোচ ছিলেন। এই মুহূর্তে আপনারা কোন মাপকাঠির কোচ খুঁজছেন? লাল-সাদা বলের জন্য আলাদা কোচ খুঁজছেন কিনা?
নাজমুল হাসান পাপন: আমরা একজন কোচই খুঁজছি। সেটি হেড কোচ। সাথে একজন সহযোগী কোচ। আপাতত সব ফরম্যাট মিলিয়ে একজনই খুঁজছি আমরা।
নোমান মোহাম্মদ: চন্ডিকা হাতুরাসিংহের কি সুযোগ আছে?
নাজমুল হাসান পাপন: আছে। আমরা এমন একজনকে খুঁজছি যে পুরো সময় দেবে। আপনি যদি এখন অল্প দিনের জন্য কোচ খোঁজেন, তাহলে বিশ্বের সেরা কোচও পেতে পারেন।
নোমান মোহাম্মদ: আইপিএল, সিপিএল, পিএসএল এসবের বাস্তবতায় এটা কি সম্ভব?
নাজমুল হাসান পাপন: এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। অনেকেই এই বিষয়টা ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু আমরা দেইনি। তাতে হয়তো সেরা কোচ পেলাম না, কিন্তু পুরো সময় দেবে, এমন কাউকেই প্রয়োজন।
নোমান মোহাম্মদ: বিপিএল নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। সাকিব একটা অনুষ্ঠানে বলেছেন, যা-তা বিপিএল চলছে; সাথে আরও কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। ডিআরএস কেন নেই? ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মানও বিপিএলের চেয়ে ভালো। এটা নিয়ে কি পরবর্তীতে সাকিবের সাথে আপনার কোনো কথা হয়েছে? সাকিবের এসবের কথার কোনো প্রসঙ্গে আপনি কি দ্বিমত পোষণ করেন?
নাজমুল হাসান পাপন: প্রথমত, এটা নিয়ে সাকিবের সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। আমার কাছে মনে হয়, এগুলো কথা বলার মত কোনো বিষয়ই না, বিশেষ করে যখন সাকিব বলে। সমস্যাটা আসলে কোথায়? আগে বিতর্কে না যাই, আপনি বলেন এবারের বিপিএলে সমস্যা কি?
নোমান মোহাম্মদ: ধরুন, ডিআরএস নেই।
নাজমুল হাসান পাপন: ডিআরএস নেই, কারণ যে কোম্পানি ডিআরএস দেয় তাদের কাছে নেই।
নোমান মোহাম্মদ: কিন্তু বিপিএলের পরে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা টি টোয়েন্টি লিগ, সংযুক্ত আরব আমিরাত টি টোয়েন্টি লিগে তো ডিআরএস আছে।
নাজমুল হাসান পাপন: সহজভাবে বললে, এটা সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ বাতিল করে এই টুর্নামেন্ট করছে। তাদের পয়েন্ট দিয়ে দিয়েছে এবং এফটিপি (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) বাদ দিয়ে লিগ চালাচ্ছে। আমি যদি ভারত সিরিজ বাদ দিতাম, তাহলে আমিও পারতাম। আবার দক্ষিণ আফ্রিকা টি টোয়েন্টি লিগ, সংযুক্ত আরব আমিরাত টি টোয়েন্টি লিগ চালাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। আপনি যদি এটা বেস্ট মনে করেন আমরাও তাদের কাছে লিগ দিয়ে দিই, তাহলে ফাইন! আমরা ভুল করেছি। কিন্তু এফটিপি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে পরিকল্পনা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এফটিপি দিয়ে দেয়ার পরই সব হয় না। প্রত্যেকটি দেশের সাথে আবার আমাদের নিশ্চিত করতে হয়। আগে আমরা দেখেছি অনেকে আবার খেলতে আসে না। অনেকে সিরিজের সূচি পরিবর্তন করে। এসব দিক নিশ্চিত করার পরই আমরা বিপিএলের সূচিটা বেছে নিয়েছি এবং এখন থেকে প্রতিবছর এমনটাই হবে। আইপিএলকে আলাদা রেখে এফটিপি তৈরি করা হয়েছে। যার জন্য সবার ক্ষেত্রে একই সমস্যা হবে। এখন যে কোম্পানির সাথে আমরা ছয় মাস আগে থেকেই যোগাযোগ করছি, তারা এই মুহূর্তে ডিআরএস দিতে পারছে না। তাদের কাছে নেই। আমি যতটুকু জানি, আইসিসিও আমাদের জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সামনে এটি অবশ্যই আসবে। আর ডিআরএস নেই এমনটি কিন্তু না!
নোমান মোহাম্মদ: এডিআরএস আছে!
নাজমুল হাসান পাপন: বিষয়টি হচ্ছে, ‘হক আই’ নেই।
নোমান মোহাম্মদ: কিন্তু যেটি আছে সেখানে বিভ্রান্ত আরও বেড়ে যাচ্ছে।
নাজমুল হাসান পাপন: আইসিসি অনেক খেলায় এমনটাই করে। আপনি দেখেন, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, নারী বিশ্বকাপ এগুলোতে কি থাকে! সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি যখন প্রথম এসেছিলাম তখনই বলেছি বিপিএল একটা ঝামেলা। আমার কাছে মনে হয় এটি সবচেয়ে খারাপ জায়গা।
নোমান মোহাম্মদ: এক বছর বন্ধ রেখেছিলেন বিপিএল।
নাজমুল হাসান পাপন: হ্যাঁ। এক বছর বন্ধ রেখে পুরো জিনিসটা পরিবর্তন করলাম। দেখলাম এরা মূলত কি চায়। এরা চায় আইপিএলে যেমন নিলাম হয়, সেটা চায়। আমি শুনেছি সাকিব নাকি বলেছে।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি বারবার ওই প্রসঙ্গে বলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বিতর্কিত করতে চায়। কিন্তু সাকিব আল হাসানের তো আর বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বিতর্ক ছড়ানোর কথা না। আপনি কি এ রকম মনে করেন কিনা যে, সাকিব এমন কিছু বলতে পারে যেটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নেতিবাচক হবে?
নাজমুল হাসান পাপন: ও (সাকিব) কিছু বলতে পারে কিনা, জানি না। কিন্তু ওর এসব কথা বাইরে একটা নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই ফেলে। এত দিন শুনেছি আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের অবস্থা অনেক খারাপ, বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এখন শুনছি সেটা নাকি ভালো চলছে। সাকিবের সেই কাহিনী (আম্পায়ার বিতর্ক) প্রচার করে বিপিএলে এটা ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আসলে তেমন বিষয় না।
নোমান মোহাম্মদ: সাকিব বলেছেন, এক থেকে দুই মাস সময় পেলে অনেক পরিবর্তন আনবেন। আপনার কাছে কী মনে হয়?
নাজমুল হাসান পাপন: সাকিব এর আগে বলেছিল, সে বিসিবি প্রেসিডেন্ট হলে অনেক কিছু করবে। কারণ ও জানে, এটা সম্ভব না। সেটা সম্ভব হতে হলে আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাদ পড়তে হবে। সেটা ভিন্ন কারণ। এখন আবার বলেছে, আমি যদি সিইও হই। কারণ সে তো সিইও হবে না। সেজন্য বলতে অসুবিধা নেই। এখন আমি বা আপনি যদি বলি, আমি যদি সাকিব হতাম, তাহলে এগুলো এগুলো করতাম। এখানে আপনি বলেই দিচ্ছেন যে, আপনি সাকিব হতে পারবেন না। একইভাবে সাকিব পরোক্ষভাবে বলেই দিচ্ছে যে সে যেটা বলছে তা সম্ভব না। সেজন্য, আমি এই বিষয়গুলো এভাবেই দেখছি।
আবার সাকিব যদি সিইও হয়েও যেত কি পরিবর্তন নিয়ে আসত? বড়জোর বলত, আমরা এফটিপি খেলব না। কিন্তু আমরা তো এটা মানি না। সাকিব সিইও হয়ে বললেও আমরা এটা মানি না। এছাড়া সাকিব, মাশরাফি বা বিশ্বের সব ভালো পরিকল্পনাকারীদের নিয়ে দেখান যে এই সূচি ছাড়া অন্য বিকল্প আমাদের ছিল কিনা। এগুলো আমরা জানি। এখন যেসব মানুষ অবগত না, তাঁরা এসব জেনে খুশি হয়। আবার অনেক এগুলো প্রচার করে তাদের টিআরপি বাড়ায়। এখানে মানুষ যদি এসব জেনে খুশি হয়ে, সেখানে আমার কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু একটা কথা বলব, বোর্ডকে সমালোচনা করার ক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি নেই। বোর্ডের পরিচালক, প্রেসিডেন্ট এদের নিয়ে সমালোচনা করার ক্ষেত্রেও আপত্তি নেই। কিন্তু এমন কিছু বলা উচিত না যেটা দেশের ক্রিকেটকে বাইরে অনেক ছোট করে ফেলে। বিশেষ করে এমন এক সময় যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট ভালো অবস্থানে আছে। যখন আমি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হয়ে আসলাম তখন ভারতের একটা সিরিজ আসে। সম্ভবত বিনিকে ক্যাপ্টেন করে দল পাঠায়।
নোমান মোহাম্মদ: হ্যাঁ, ২০১৪ তে।
নাজমুল হাসান পাপন: কিন্তু এখন দেখেন। বিশ্বকাপের পরপরই ভারত সিরিজ খেলতে গেল নিউজিল্যান্ডে। সেখানে রোহিত, লোকেশ রাহুল, কোহলি নেই। এখন শ্রীলঙ্কার সাথে খেলছে সেখানেও তাঁরা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে! তাঁরা সবাই খেলছে। এখন প্রত্যেকটা দেশ বাংলাদেশকে অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশের সাথে জেতা এখন মোটেও সহজ না। দ্বিতীয় সারির দল বাদ দেন, মূল দলই হিমশিম খাবে। এ বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। এই মুহূর্তে আমার একটাই আশা বাকি, বা দল হিসেবে যেসব সাফল্য এখন বাকি সেটা হচ্ছে, সব দেশের সাথেই আমরা সিরিজ জিতেছি শুধুমাত্র ইংল্যান্ড বাদে। সেটা এখন পারব কিনা জানি না। কারণ তাঁরা দারুণ ফর্মে আছে। দুটো বিশ্বকাপ জিতেছে। এখন তাদের সাথে জিততে পারলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম, তার একটি পূরণ হবে। তারপর পরবর্তী ধাপে যাব। আমার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল সেমিফাইনাল।
নোমান মোহাম্মদ: ২০২৩ বিশ্বকাপে সেটা কি সম্ভব?
নাজমুল হাসান পাপন: সম্ভব হওয়া উচিত। এখন আপনি বলেন, ভারতে সাথে আমরা যে দ্বিতীয় টেস্ট হেরে গেলাম, এটা কি উচিত ছিল না? না জিততে পারলে আর কি করা যায়? এখানে বোর্ড বা কোচ কি করবে? আবার খেলোয়াড়গুলো যে খারাপ, এমনও তো নয়। ভাগ্যে যদি না থাকে, সেখানে কী করা! এটা বাদে মাঠ, স্টেডিয়াম আর একাডেমিগুলো হয়ে গেলে আরেকটি উদ্দেশ্য পূরণ হবে। কিন্তু আরেকটি স্বপ্ন থেকেই যাচ্ছে। জানি না পূরণ হবে কিনা। তবে আমি অনেক আশাবাদী। সেটি হচ্ছে ফাইনাল বা অন্তত সেমিফাইনাল খেলা। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই। টেস্টে এখনই না। টেস্টে আমাদের এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত র্যাংকিংয়ে ৭ কিংবা ৮ এ উঠে আসা।
নোমান মোহাম্মদ: শেষ প্রশ্ন, আপনি যে স্বপ্নগুলোর কথা বললেন সেসব বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে দেখে যেতে পারবেন বলে মনে হয় কিনা? ইতোমধ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আপনার চিকিৎসক বলেছেন ক্রিকেট নিয়ে এত চিন্তা না করতে…
নাজমুল হাসান পাপন: সমস্যা হচ্ছে, সম্প্রতি ভারতের যে সিরিজটা শেষ হল সেখানেও আমার অবস্থা খারাপ ছিল। এত চিন্তা নিয়ে আসলে খেলা দেখা যায় না। মিরাজ যেভাবে ইনিংস খেলছিল, যেভাবে আমরা দুটো ম্যাচেই জিতলাম। একটিতে রিয়াদ অনেক সহায়তা করেছে, অন্যটিতে মুস্তাফিজকে নিয়ে যেটা – ভাবাই যায়না। কিন্তু মিডিয়াতে আপনারা কি লিখলেন? আমি টিভিতে দেখলাম সাত বছর পর নাকি আমরা ভারতের বিপক্ষে জিতলাম। সাত বছর ধরে কি আমরা হেরেছি ভারতের কাছে? বিষয়টা বুঝলাম না। কিন্তু শিরোনামটা এমনই ছিল। তাঁরা আসল সাত বছর পর। আগেও হেরে গেছে, এবারও হারল। এসব বিষয়ে একটু অনুপ্রেরণা দেয়া উচিত। আমি না হয় খারাপ কাজ করেছি, কিন্তু বোর্ডে কেউ তো ভালো কাজ করেছে, যেটা ছাড়া এগুলো সম্ভব না। সব দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। কিন্তু আশা করছি অবকাঠামোগত কাজগুলো করে যাব। আমার তো আর বেশি দিন সময় নেই।
নোমান মোহাম্মদ: এবারেই কি শেষ?
নাজমুল হাসান পাপন: আমার তো গতবারই শেষ ছিল। এখন যেটা আছি সেটা আসলে থাকার মত না। আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব না, সমস্যা এখানেই। কিন্তু এমনটা না যে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। এটাই বাস্তবতা।
মন্তব্য করুন: