আমি বিশ্বাস করি, ১৫০ স্ট্রাইক রেটে খেলা সম্ভব: শান্ত
৪ মার্চ ২০২৩
বিপিএলে সর্বোচ্চ ৫১৬ রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারও জিতেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনার। বিপিএল সাফল্য, ট্রলের জবাব, জাতীয় দলে থিতু হওয়া, অতীতের ভুল, ভবিষ্যত পরিকল্পনা – এসব নিয়ে তাঁর ভাবনা কী? নোমান মোহাম্মদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অকপট নাজমুল হোসেন শান্ত।
নোমান মোহাম্মদ: প্রথমত আপনাকে অভিনন্দন। অসাধারণ এক বিপিএল কেটেছে। কেমন লাগছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: ধন্যবাদ। অবশ্যই, খুব ভালো একটি টুর্নামেন্ট কেটেছে। যদিও আমরা শিরোপা জিততে পারিনি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভালো টুর্নামেন্ট কেটেছে আমার।
নোমান মোহাম্মদ: টুর্নামেন্টের শুরুতে কোন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন? সর্বোচ্চ রান করা কিংবা অমন কিছু?
নাজমুল হোসেন শান্ত: না। কখনোই এরকম লক্ষ্য থাকে না। সব সময় আমার লক্ষ্য থাকে, প্রতি ম্যাচে দলের হয়ে কিভাবে অবদান রাখব। সেটি হতে পারে ব্যাটিংয়ে বা ফিল্ডিংয়ে। টুর্নামেন্ট শেষে ভালো রান করতে পেরেছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, আমি দলের হয়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই অবদান রাখতে পেরেছি।
নোমান মোহাম্মদ: বিপিএলে এবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলেছেন। বিপিএলে আগে যেসব দলের হয়ে খেলেছেন, সেগুলোর চেয়ে কোন দিক থেকে আপনার কাছে এ দলটি আলাদা মনে হয়েছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমি বিপিএলের যতগুলো আসর খেলেছি, তার মধ্যে এবারের সিলেট স্ট্রাইকার্স অন্যতম সেরা ফ্রাঞ্চাইজি। যে বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে, তাঁরা (ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকপক্ষ) খুব ফ্রেন্ডলি। তাঁরা এমন ভাবে আমাদের সঙ্গে মিশেছেন, মনে হয়েছে তাঁরা মালিক নন। তাঁদের সে রকম কোন আশা ছিল না যে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। তাঁরা মূলত চেয়েছিলেন, মাঠে যেন আমরা শতভাগ দিয়ে ভালো ক্রিকেট খেলি। এই ব্যাপারগুলো আমাদের বা আমার পারফর্ম করার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছে। সেজন্য শুরুতেই বললাম, এবার অন্যতম সেরা একটি ফ্রাঞ্চাইজির সঙ্গে আমি খেলেছি।
নোমান মোহাম্মদ: অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
তিনি (মাশরাফি) অনেক সাহসী মানুষ। প্রতিটা খেলোয়াড়কে তিনি সাহস দিয়েছেন। অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে যখন দুই-একটা ইনিংসে রান হয়নি, তখন এমন হয় যে মাঠে গিয়ে শট খেলার প্রবণতা একটু কম থাকে। সে সব জায়গায় তিনি পরিষ্কার ভাবে পরিকল্পনা দিয়েছেন। আমি, তৌহিদ হৃদয় বা অন্যান্য যারা ছিলেন, সবার ক্ষেত্রেই একইভাবে পরিকল্পনা জানিয়েছেন। যা মাঠে অনেক সাহায্য করেছে।
নোমান মোহাম্মদ: দলে নিজেদের মধ্যে আপনাদের কোন প্রতিযোগিতা ছিল কি না? আপনার সঙ্গে হৃদয় বা জাকিরের; একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার? সেটি আপনাদের কোন সাহায্য করেছে কি না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই। এটি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ছিল। স্বাস্থ্যকর একটি প্রতিযোগিতা। বিষয়টি নিয়ে যে আমরা অনেক বেশি আলাপ করেছি, এমন না। কিন্তু মাঠে খেলার সময় এমন প্রতিযোগিতা থাকেই। আমাদের লক্ষ্য ছিল, দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই।
নোমান মোহাম্মদ: বিপিএল তো অনেক ভালো কাটল। সামনে জাতীয় দলের অনেক ম্যাচ রয়েছে। নিশ্চয়ই এই ফর্ম আপনাকে সেখানেও অনেক সাহায্য করবে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই। যেহেতু ভালো একটি টুর্নামেন্ট শেষ করেছি, আশা করব এখানে সময়টা যেভাবে পার করলাম, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেভাবেই নিয়ে যেতে পারব।
নোমান মোহাম্মদ: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের কথা যদি বলি, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। এরপর বিপিএলের সর্বোচ্চ রান। এমন পারফরম্যান্স আপনাকে এই ফরম্যাটে থিতু হতে কিভাবে সাহায্য করছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অনেকভাবেই। বিপিএলের আগে ব্যক্তিগতভাবে আমার স্কিল নিয়ে অনেক কাজ করা হয়েছে। সেটির ফলাফল হয়ত আমি আস্তে আস্তে পাচ্ছি। কিন্তু এখনও অনেক উন্নতির জায়গা রয়েছে। এই দুটি টুর্নামেন্ট, বিশেষ করে বিশ্বকাপ অনেক বড় একটি মঞ্চ ছিল। সেখানে ভালো করার আত্মবিশ্বাস সামনে আমাকে আরও সাহায্য করবে বলে আমার মনে হয়।
নোমান মোহাম্মদ: বিশ্বকাপ এবং বিপিএল, এই দুটো টুর্নামেন্টে আপনার পারফরম্যান্সে অনেকেই হয়ত একটু অবাক হয়েছেন। আপনি নিজে কি অবাক হয়েছেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: সত্যি বলতে, আমি একদমই অবাক হইনি। আমি যে কোচদের সঙ্গে কাজ করি, আমার মনে হয় না, তাঁরাও অবাক হয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত, অতীতে আমি হয়তো তেমন ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল যে, পারব। যখন ভালো করছি, আমার আশেপাশের মানুষ বা কোচ কেউই এতে অবাক হননি।
নোমান মোহাম্মদ: মানুষ কেন অবাক হয়?
নাজমুল হোসেন শান্ত: এটা আসলে যার যার চিন্তা-ভাবনা। তারা যেটা দেখে, সেটা নিয়েই মূলত চিন্তা করে। আমরা কতটুকু পরিশ্রম করি, তা হয়তো জানেন না। আমি তাদের দোষ বলব না। তাঁরা হয়তা আমাকে নিয়ে আশা করে যে, আমি আরও ভালো কিছু করতে পারি। সে আবেগ থেকে হয়তো অনেকে অনেক কিছু বলেন।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি তো ব্যাপারটা অনেক ভালো ভাবে বললেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা হয়, সেগুলোর জন্য নিজেকে দুর্ভাগা মনে হয় না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার কাছে এমন কিছু মনে হয় না। অতীতে অনেক খেলোয়াড়ের সাথেই এমনটি ঘটেছে। বাংলাদেশে যাঁরা বড় বড় তারকা এখন আছেন বা অতীতে খেলেছেন, তাঁদের নিয়েও এমন হয়েছে। আমি নতুন কেউ না। এটা নিয়ে আসলে খুব বেশি চিন্তা করার সুযোগ নেই। ক্রিকেট খেললে এমনটি হবে। ভালো খেললে ভালো কথা হবে। খারাপ খেললে সবাই খারাপ বলবে। এটা স্বাভাবিক। তাই এটি নিয়ে যত বেশি চিন্তা করব, আমার মনে হয় আমি আমার লক্ষ্য থেকে ততটাই দূরে সরে যাব।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি বাংলাদেশের অনেক বড় বড় তারকার কথা বললেন। আমি উদাহরণস্বরূপ যদি বলি, এক সময় লিটন দাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু এখন লিটন যখন পারফর্ম করছেন, তিনি আবার সবার পছন্দের তালিকায় চলে এসেছেন। এই ব্যাপারটি আপনাকে অনুপ্রেরণা দেয়া কি না যে, আমি পারফর্ম করলে বাকি কিছুই প্রভাব ফেলে না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই, এটি আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আপনিও যেটি বললেন, দিন শেষে ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি আমি রান করি, তখন এসব নিয়ে কখনোই কথা হবে না। এখানে আসলে দায়িত্বটা আমার। আমি কিভাবে প্রতিদিন দলের হয়ে অবদান রাখছি, কিভাবে রান করছি। এগুলো যদি করতে পারি তাহলে কখনোই আমার মনে হয়না এসব নিয়ে কথা হবে। দায়িত্বটা আমার, আমাকেই করতে হবে।
নোমান মোহাম্মদ: একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়ে পুরো বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলি’। নিশ্চয়ই অনেক দুঃখ থেকে কথাটি বলেছিলেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: হ্যাঁ। অনেক সময় এমন মনে হয়। যখন আমি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেলাম, এরপরও অনেক কথাবার্তা হয়েছে। যদিও আমি এগুলো সেভাবে লক্ষ করি না। কিন্তু বন্ধু বা আশেপাশের মানুষের কাছে থেকে যখন শুনি, তখন হয়ত অনেক খারাপ লাগা থেকেই বলে ফেলেছিলাম।
নোমান মোহাম্মদঃ: আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: না।
নোমান মোহাম্মদ: একেবারেই না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: সত্যি বলতে, আগে ব্যবহার করেছি। কিন্তু এক সময় মনে হয়েছে, আমি অযথা সময় অপচয় করছি। সে কারণে এখন সেভাবে ব্যবহার করি না।
নোমান মোহাম্মদ: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার শুরুটা একদম স্বপ্নের মত না। ২১ টেস্টে মাত্র দুটি সেঞ্চুরি। ১৫ ওয়ানডেতে এখনও কোন ফিফটি নেই। ১৭টি টি-টোয়েন্টিতে যে দুটি ফিফটি, তা বিশ্বকাপে। আপনার বয়স এখনও মাত্র ২৪ বছর। নিশ্চয়ই এগুলো পুষিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় আপনার কাছে আছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: সময় অবশ্যই আছে। যত দ্রুত আমি ফিরতে পারব, ততই আমার ক্যারিয়ারের জন্য, দলের জন্য ভালো। অতীতে কী ঘটে গেছে, সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে দু-তিনটি ভালো ইনিংস হয়তো আমার জায়গা শক্ত করতে সাহায্য করবে।
নোমান মোহাম্মদ: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে স্ট্রাইক রেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ ফরম্যাটে আপনার স্ট্রাইক রেট ১০৮। এমনকি বিপিএলে এবার যে সবচেয়ে বেশি রান করলেন, সেখানে আপনার স্ট্রাইক রেট ১১৬। এ জায়গাটায় অনেক উন্নতির সুযোগ আছে বলে আপানার মনে হয় না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই উন্নতির জায়গা আছে। বিপিএলে আমার যে ইনিংসগুলো বড় হয়েছে, সেগুলোতে স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর বেশি ছিল। যে ইনিংসগুলো বড় করতে পারিনি, সেগুলোর জন্য স্ট্রাইক রেট একটু কম হয়েছে। এটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কারণ আছে বলে আমার মনে হয়নি। কারণ আমি আমার দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি। যদি পরিকল্পনা ভিন্ন থাকত, যদি ১৫০ স্ট্রাইক রেটে খেলতে বলা হত, তাহলে শুরু থেকেই সেভাবে চেষ্টা করতাম। সফল হতাম কি না, ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাকে যেভাবে পরিকল্পনা দেয়া হয়, সেভাবেই পূরণ করার চেষ্টা করি।
নোমান মোহাম্মদ: আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন যে, যদি দল থেকে আপনাকে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করার চাহিদা দেয়া হয়, তাহলে আপনি সে অনুযায়ী খেলতে পারবেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: প্রত্যেকটা টুর্নামেন্ট বা সিরিজের আগে আমার একটা প্রস্তুতি থাকে। কোচ, কোচিং স্টাফ বা অধিনায়ক আমাকে একটা পরিকল্পনা দেন। তখন সেই অনুযায়ী আমি প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমাকে যদি এমন পরিকল্পনা দেয়, তাহলে আমি বিশ্বাস করি ১৫০ স্ট্রাইক রেটে খেলা সম্ভব।
নোমান মোহাম্মদ: প্রশ্নটি করার কারণ হচ্ছে, নাঈম শেখ একসময় নিয়মিত রান করেছেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে স্ট্রাইক রেট বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। এই স্ট্রাইক রেট নিয়ে কাজ করায় নিজের মধ্যে সেই তাগিদ অনুভব করেন কি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই। নিজে থেকেই চাইব যে, আমি এই জায়গা কিভাবে উন্নত করতে পারি। এখানে উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। আশা করছি, সামনে যে সিরিজগুলো আসবে এবং সেগুলোর প্রস্তুতির সময়, সেই অনুযায়ী কাজ করব।
নোমান মোহাম্মদ: সামনেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আবার কোচ হয়ে আসলেন। তাঁর সাথে কথা হয়েছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: এখন পর্যন্ত হয়নি। আশা করছি তাঁর সঙ্গে ভালো কাজ করতে পারব।
নোমান মোহাম্মদ: কী কারণে জাতীয় দলের সব বিদেশি কোচ আপনাকে পছন্দ করেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: জানা নেই।
নোমান মোহাম্মদ: আমরা দেখেছি যে, যতগুলো কোচের অধীনে আপনি কাজ করেছেন, সবার প্রিয় আপনি। স্টিভ রোডস বা রাসেল ডমিঙ্গো বিদেশি কোচদের এই পছন্দ কী কারণে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: এটা তো আমি জানি না। যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারবেন, যে কী কারণে পছন্দ করেন।
নোমান মোহাম্মদ: কিন্তু এটা তো বুঝতে পারেন যে, কোচরা আপনাকে পছন্দ করছেন? নাজমুল হোসেন শান্তঃ শুরু থেকেই আমাকে সবাই পছন্দ করেন।
নোমান মোহাম্মদ: আপনার কি মনে হয়, আপনার ওপর দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক? বয়সভিত্তিক দল থেকেই বোঝা যাচ্ছিল আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরবর্তী ‘বিগ থিং’। প্রত্যাশার জায়গাটা বেশি ছিল বলেই কি আপনি যখন পারফর্ম করেন না, মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: হতে পারে। আমার, আমার পরিবার, বিসিবি সবারই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সত্যি বলতে, এই মুহূর্তে আমি প্রত্যাশা নিয়ে কোন চিন্তায় করছি না। জানি না সবাই এটা বিশ্বাস করবেন কি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি খেলাটা শুধু উপভোগ করছি। রান করি বা না করি, যে অবস্থাতেই থাকি, খেলাটা উপভোগ করে যাচ্ছি। ব্যাটিংয়ে এটি আমাকে সাহায্য করছে। খেলা নিয়ে যে অতিরিক্ত চিন্তা হয়, সেগুলো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করছি।
নোমান মোহাম্মদ: এখানে আবারও আমি লিটন দাসের উদাহরণ আনতে চাই। লিটনকেও আমাদের পরবর্তী ‘বিগ থিং’ ধরা হয়েছিল। তাঁর ক্ষেত্রেও প্রত্যাশার জায়গা পূর্ণ করতে ৪/৫ বছর সময় লেগেছে। জাতীয় দলে গত এক-দেড় বছর ধরে তিনি ধারাবাহিক হয়েছেন। এ ক্ষেত্রেও কি লিটন আপনার কাছে উদাহরণ কি না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: লিটনসহ আরও অনেকেই আছেন আমাদের দেশে। যাঁরা অনুপ্রেরণা দেন। রান করলে এগুলো নিয়ে কোন কথাই হবেনা। দলের হয়ে যদি নিয়মিত রান করি, তাহলে এত কথা বা সমালোচনা কিছুই হবে না। আমি কিভাবে রান করি বা করতে পারব এবং রান করার জন্য যেসব করা দরকার, সেগুলো ঠিকমত করছি কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
নোমান মোহাম্মদ: আমাদের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবেই শুধু আপনাকে ধরা হয়নি, ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবেও বিসিবি আপনাকে নিয়ে অনেক আগে থেকে ভাবছে। নিজেও কি ভাবেন, এক সময় জাতীয় দলের অধিনায়ক হবেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মাঝে মধ্যেই অধিনায়কত্ব করেছি। ‘এ’ দল বা ‘হাই পারফরম্যান্স’ সবখানেই। বিষয়টি উপভোগও করি। সত্যি বলতে, এখন অধিনায়কত্ব না করলেও মাঠে নিজের এমন অনুভূতি কাজ করে যে, আমিই অধিনায়ক। নিজে থেকেই চিন্তা করি যে, কিভাবে দলের সাহায্য করতে পারি। জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া আসলে আসলে অনেক দূরের কথা। এটি নিয়ে এখনই চিন্তা করছি না। এখন মূল লক্ষ্য, কিভাবে দলে আরও বেশি অবদান রাখা যায়।
নোমান মোহাম্মদ: তিন ফরম্যাটেই সমান তালে খেলা চালিয়ে যাতে চান? নাকি আপনার এমন মনে হয়, এক বা দুইটা ফরম্যাট ছাড়লে তা বেশি কার্যকারী হতে পারে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: বিশ্বমানের খেলোয়াড় হতে হলে তিন ফরম্যাটেই সমান পারফর্ম করতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত আমি এমনটা করতে পারিনি। কিন্তু স্বপ্ন এটিই যে, কিভাবে তিন ফরম্যাটে একই সঙ্গে পারফর্ম করতে পারি।
নোমান মোহাম্মদ: মানুষের ট্রলে আপনার মতো আপনার পরিবারেরও নিশ্চয়ই অনেক মন খারাপ হয়। বিশ্বকাপ এবং বিপিএলের পারফরম্যান্সের পর তাঁরা কি এখন একটু স্বস্তিতে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: এখন পরিবারের সবাই অনেক খুশি। ভালো একটি টুর্নামেন্ট গেছে। ছয় মাস আগের কথাও যদি বলি, তখন তারা অনেক বেশি মন খারাপ করত। কিন্তু এখন এগুলো কেউই তেমন চিন্তা করে না। বিষয়টার সঙ্গে সবাই মানিয়ে নিয়েছে। তারাও বুঝেছে, ক্রিকেট খেলতে হলে এমন হবেই। অনেক বড় বড় তারকাদের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আমি এমন কেউ নই যে, আমাকে নিয়ে সমালোচনা হবে না।
নোমান মোহাম্মদ: যেটি আপনি মানিয়ে নিয়েছেন, সেটি দেশের তরুণ প্রজন্মের অন্য ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে অনেক সময় লাগবে। পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনার কোন পরামর্শ আছে কি না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: বাইরের এসব নিয়ে চিন্তা না করে নিজেকে নিয়ে ভাবা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাটা উপভোগ করতে পারলে বাইরের এত কথা, সমালোচনা কিছুই আঘাত লাগবে না। আমরা যখন ছোটবেলায় পাড়ায় খেলেছি, তখন খেলাটা উপভোগ করেছি। সে কারণেই কখনও খারাপ লাগত না। নতুন যারা আসবে তাদের জন্য আমি এটাই বলব যে, খেলাটা সবাই যাতে উপভোগ করে।
নোমান মোহাম্মদ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে এটি বলা অনেক সহজ হলেও করা নিশ্চয়ই অনেক কঠিন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অবশ্যই কঠিন। পৃথিবীর সবকিছুই কঠিন। এত সহজে কোন কিছু পাওয়া যায় না। আর যে জিনিসটা আরামে পেয়ে যাচ্ছি, সেখানে মজাটাও কম। যেটা আমি কষ্ট করে অর্জন করি, সেখানে আলাদা ভালো লাগা কাজ করে। তাই এই বিষয়টি কঠিন হলেও করা সম্ভব।
নোমান মোহাম্মদ: সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে, এমন চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: সেজন্য কখনও খেলিনি বা এমন চিন্তাও আসেনি যে, ভালো খেললে মানুষকে এটার জবাব দেয়া হবে। আমার চেষ্টা থাকে, কিভাবে ভালো খেলতে পারি। কিভাবে স্বপ্ন কিভাবে পূরণ করতে পারি।
নোমান মোহাম্মদ: সেই বড় স্বপ্নের জায়গাটা কোনটি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: (হাসি) স্বপ্নের ব্যাপারটি আমি কাউকেই জানাইনি। এটি একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। যদি সেটি পূরণ করতে পারি, তাহলে সবাই জানবে।
নোমান মোহাম্মদ: কত বছর পরে আমরা জানতে পারব?
নাজমুল হোসেন শান্ত: ক্রিকেট শেষে।
নোমান মোহাম্মদ: আমরা অত দূরে যাচ্ছি না, সামনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ। এই সিরিজে আপনার লক্ষ্য কি?
নাজমুল হোসেন শান্ত: যদি সুযোগ আসে চেষ্টা করব দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটিং করার। প্রতি ম্যাচে কিভাবে ভালো করতে পারি এটিই লক্ষ্য থাকবে।
নোমান মোহাম্মদ: চলতি বছরেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেটা কি মাথায় থাকবে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: এখন প্রতিটি ম্যাচই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যখনই ম্যাচ খেলি, এটি মাথায় রাখি। এতে আমার ব্যাটিংয়ে হয়ত আরও সুবিধা হয়। একই সঙ্গে অতীতে যা ঘটে গেছে, সেগুলোর চিন্তাও মাথায় আসে না।
নোমান মোহাম্মদ: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে যদি সুযোগ পান কিংবা ধরুন, বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত প্রতিটা ম্যাচকে কি আপনি বিশ্বকাপে দলে সুযোগ পাওয়ার পরীক্ষা হিসেবে দেখবেন কি না?
নাজমুল হোসেন শান্ত: দেশের হয়ে প্রতিটা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। যদি সুযোগ পাই এবং ভালো করতে পারি, তাহলে দলে থাকার সুযোগ তৈরি হবে। এখন যে ম্যাচগুলো খেলব, প্রতিটিই আমাকে সাহায্য করবে সামনে আরও সুযোগ পাওয়ার জন্য।
মন্তব্য করুন: