অপূর্ণতা নিয়েই পিএসজি ছাড়লেন নেইমার

১৬ আগস্ট ২০২৩

অপূর্ণতা নিয়েই পিএসজি ছাড়লেন নেইমার

ছয় বছর আগে রেকর্ড ২০ কোটি পাউন্ডের চুক্তিতে বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইতে যোগ দিয়েছিলেন নেইমার। ৩১ বছর বয়সে এসে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ছাড়লেন ইউরোপ। অনেকটা অপূর্ণতা নিয়েই পাড়ি জমালেন আলোচিত সৌদি লিগে।

এটা এমন এক দলবদল যা ফুটবল বিশ্বের জন্য বড় এক ধাক্কা। ধারণা করা হচ্ছে, দুই বছরের এই চুক্তিতে আল-হিলাল ক্লাব থেকে বছরে ১৫ কোটি ইউরো পারিশ্রমিক পাবেন নেইমার, যা পিএসজিতে তার আয়ের ছয় গুণ।

পিএসজির হয়ে ১৭৩টি ম্যাচ খেলেছেন সাবেক এই বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। পাঁচটি লিগ ওয়ানের শিরোপাসহ ক্লাবকে মোট ১৩টি শিরোপা জিততে সাহায্য করেছেন।

কিন্তু নেইমারের ঝুলিতে নেই ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে অভিজাত পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস লিগ। অথচ এই শিরোপা জিততেই রেকর্ড গড়ে তাকে আনা হয়েছিল, যার স্বাদ এখন পর্যন্ত পায়নি ফেঞ্চ জায়ান্টরা। সবচেয়ে কাছে তারা যেতে পেরেছিল ২০২০ সালের ফাইনালে।

সান্তোস থেকে সৌদি আরব। কেমন ছিল নেইমারের যাত্রা?

১৭ বছর বয়সে নেইমারের প্রথম পেশাদার চুক্তিটি ছিল সান্তোসের সঙ্গে২০০৯সান্তোসের মূল দলে অভিষেক

নেইমারের ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল জন্মস্থান ব্রাজিলেই। ১৭ বছর বয়সে তার প্রথম পেশাদার চুক্তিটি ছিল সান্তোসের সঙ্গে। একই বছরে অভিষেক হয় ক্লাবটির মূল দলে। ২০০৯ সালের মার্চ নিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্তের বিপক্ষে মাঠে নামেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে।

সপ্তাহ খানেক পরেই সান্তোসের হয়ে করেন প্রথম গোল। সেই মৌসুমে ৪৮ ম্যাচে ১৪টি গোল করেছিলেন নেইমার। 

২০১০ব্রাজিল দলে অভিষেক

পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের বছর না পেরোতেই ব্রাজিলের মূল দলে ডাক পান কিশোর নেইমার।

১০ আগস্ট দেশের হয়ে তার প্রথম ম্যাচটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। অভিষেকের মাত্র ২৮ মিনিটেই পেয়েছিলেন গোলের দেখা। আন্দ্রে সান্তোসের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে পরাস্ত করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার টিম হাওয়ার্ডকে।

জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ১২৪ বার মাঠে নেমে করেছেন ৭৭টি গোল। তবে প্রথম গোলটি এখন পর্যন্ত তার কাছে অন্যতম সেরা।

২০১৩ বার্সেলোনা এবং ব্রাজিলে সাফল্য

২০১১ সালে সান্তোসকে কোপা লিবার্তাদোরেস জিততে সাহায্য করেন নেইমার, যা ১৯৬৩ সালের পর ক্লাবটির প্রথম। এরপর তিনি পাড়ি জমান ইউরোপীয় ফুটবলে। সেখানকার শীর্ষ ক্লাবগুলো তাকে নিতে মুখিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনায় যোগ দেন এই ব্রাজিলিয়ান।

নেইমার আক্রমণভাগে লিওনেল মেসি এবং লুইস সুয়ারেসের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর এই ত্রয়ী পরিচিত হয়এমএসএননামে। নিজের দ্বিতীয় মৌসুমেই স্প্যানিশ জায়ান্টদের লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে সাহায্য করেন তিনি।

এছাড়াও বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার কিছু দিন পরেই ব্রাজিলকে জেতান ফিফা কনফেডারেশনস। জিতেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও।

মেরুদণ্ডের কশেরুকায় ফাটলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান নেইমার২০১৪ নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপে স্বপ্নভঙ্গ

ততদিনে দেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা নেইমার। ব্রাজিল ২০১৪ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ায় তার হাত ধরে সাফল্যের আশা করেছিলেন অনেকেই। 

টুর্নামেন্টের আগে এবং চলার সময় তার ছবি ছিল সবখানে। কিন্তু পুরো দেশ যেন থমকে গিয়েছিল কোয়ার্টার-ফাইনালে, যখন কলম্বিয়ার বিপক্ষে হুয়ান সুনিগার ফাউলের শিকার হন নেইমার।

ব্রাজিল জিতেছিল - ব্যবধানে। কিন্তু মেরুদণ্ডের কশেরুকায় ফাটলে বিশ্বকাপের বাকি অংশ থেকে ছিটকে যান নেইমার।

সবচেয়ে বড় তারকার অনুপস্থিতিতে দলকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল সেমিফাইনালেই। জার্মানির কাছে - গোলে বাজেভাবে হেরেছিল আয়োজকরা।

২০১৬ রেকর্ডময় মৌসুম এবং অলিম্পিক স্বর্ণ 

ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমণ ত্রয়ী হিসেবে এগুতে থাকেন নেইমার, মেসি এবং সুয়ারেস। ২০১৫-১৬ মৌসুমে এই ত্রয়ী করেন ১৩১ গোল, যা এক মৌসুমে স্প্যানিশ ফুটবল ইতিহাসের আক্রমণ ত্রয়ীর জন্য সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ব্রাজিল দলের সঙ্গে নেইমারের যোগদানের আগে এই গোলগুলো বার্সেলোনাকে লা লিগা এবং কোপা দেল রে জিততে সাহায্য করেছিল।

অলিম্পিকে স্বর্ণপদকের ম্যাচে অতিরিক্ত সময় - ড্রয়ে শেষের পর ট্রাইবেকারে - ব্যবধানে জার্মানিকে হারায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। আঘাতের কারণে বিশ্বকাপের স্বপ্নভঙ্গের দুই বছর পর এই ম্যাচের জয়সূচক কিকটি এসেছিল নেইমারের পা থেকেই।

রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে প্যারিসে পাড়ি জমান নেইমার২০১৭ ফ্রান্সে গমন

বার্সেলোনায় ১৮৬ ম্যাচে ১০৫ গোল করার পর রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে বিশ্ব ফুটবলের শিরোনামে এসে প্যারিসে পাড়ি জমান নেইমার।

আগস্টে পিএসজিতে অভিষেক ম্যাচেই পান গোল, একটি গোলে সহায়তাও করেন। কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং এদিনসন কাভানিকে নিয়ে তৈরি করেন শক্তিশালী আক্রমণ ত্রয়ী। সেই মৌসুমে ৩০ ম্যাচে করেন ২৮ গোল। অবদান রাখেন পিএসজির ট্রেবল জয়ে (লিগ ওয়ান, ফ্রেঞ্চ কাপ এবং লিগ কাপ।

কিন্তু পায়ের মেটাটারসাল হাঁড় ভেঙে যাওয়ায় তার মৌসুম শেষ হয়ে যায়। প্যারিসে একের পর এক চোটে মাঠের বাইরে থাকার সেটাই শুরু।

২০১৯-২০চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল, কিন্তু অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

পিএসজির হয়ে দুই বছর খেলার পর গুঞ্জন উঠে নেইমারের পুনরায় বার্সেলোনা ফেরা নিয়ে।

এর সূত্র ধরে জুলাইয়ে দলের প্রাক-মৌসুম অনুশীলনে যোগ না দিয়ে পিএসজিকে ক্ষুব্ধ করেন নেইমার। তবে শেষ পর্যন্ত প্যারিসেই থেকে যান তিনি।

আঘাতের প্রভাব পড়ে এই মৌসুমেও। তবুও ক্লাবকে লিগ ওয়ান জিততে এবং প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন নেইমার। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের কাছে একমাত্র গোলে হেরে শিরোপা আর জেতা হয়নি।

২০২১-২৩উত্থান-পতন

২০২১ সালের আগস্টে আর্জেন্টাইন তারকা মেসি পিএসজিতে যোগ দিলে সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন নেইমার। তবে সেই মৌসুমটি তার জন্য ছিল সবেচেয়ে হতাশাজনক। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পেয়েছিলেন মাত্র ১৩ গোলে, ইউরোপে পা রাখার পর যা ছিল যে কোনো মৌসুমের সর্বনিম্ন।

২০২২-২৩ মৌসুমে মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের পাশাপাশি ফর্মে ফেরেন নেইমারও। লিগের প্রথম পাঁচ ম্যাচে ব্যক্তিগত গোল এবং সহায়তা মিলিয়ে অবদান রাখেন ১৩ গোলে। কিন্তু মার্চে গোড়ালির অস্ত্রোপচারের পর মৌসুমের বাকি অংশে আর মাঠে নামতে পারেননি তিনি।

ফেব্রুয়ারিতে লিলের বিপক্ষে - ব্যবধানে জয়ে পিএসজির দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন নেইমার। সেটি হয়ে থাকল ক্লাবের হয়ে তার শেষ ম্যাচ।

মন্তব্য করুন: