যেদিন বিশ্বকাপ ট্রফি ছোঁয়া পেয়েছিল ফুটবল জাদুকরের
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
১৮ ডিসেম্বর ২০২২। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বজায় রাখা আর্জেন্টিনা দল যখন শিরোপা জয় উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই মুহূর্তের মধ্যে দুই গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর মনে তখন শঙ্কা জাগে, আবারও কি মারাকানার মতো স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে লিওনেল মেসির? বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফির ছোঁয়া না নিয়েই কি শেষ হতে যাচ্ছে প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই তারকার ক্যারিয়ার?
আসলে মেসির বিশ্বজয়ের চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল আরও নাটকীয়ভাবে। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে ফ্রান্সের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে আর্জেন্টিনাকে শিরোপার আরও কাছে নিয়ে যান মেসি। কিন্তু এমবাপ্পেও তো ছাড়ার পাত্র নন। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে পেনাল্টি থেকে বল জালে জড়িয়ে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান এই ফরোয়ার্ড। এই সময় হয়তো মেসির চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফাইনালের দৃশ্য। বদলি হিসেবে মাঠে নেমে ম্যাচের ১১৩তম মিনিটে গোল করে কোটি আর্জেন্টাইনের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেন জার্মানির মারিও গোটসে।
সেবার মারাকানার ফাইনালে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল মেসিকে। কিন্তু এবার লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনালে তা আর হয়নি। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর ফুটবল বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠে আর্জেন্টিনা। আর নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের একমাত্র অধরাকে শিরোপাটি নিজের করে নেন মেসি। প্রজন্মের সেরাদের একজন থেকে নিজেকে নিয়ে যান সর্বকালের সেরাদের কাতারে। মেসির হাতে বিশ্বকাপ নয়, বিশ্বকাপ শিরোপাটাই যেন মেসির ছোঁয়া পেয়ে ধন্য হয়েছিল।
তবে মেসির বিশ্ব জয়ের এই যাত্রার শুরুটা হয়েছিল বেশ বাজেভাবেই। নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরে আসর শুরু না হতেই বিদায়ের শঙ্কা জেগেছিল আর্জেন্টিনার। সেখান থেকে দলকে প্রায় একাই টেনে তোলেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। মেক্সিকোর বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মেসির একক নৈপুণ্যে ২-০ গোলের জয় পায় আর্জেন্টিনা। আর গ্রুপ-পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকেও একই ব্যবধানে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে পা রাখে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে মেসির গোলে সহজ জয় নিয়েই কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখে আর্জেন্টিনা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে পেনাল্টি শ্যুট-আউটে ৪-৩ ব্যবধানে জিতে শেষ চার নিশ্চিত করে মেসির দল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালের লড়াইটা তো ছিল শুধু মেসিময়। ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করার পাশাপাশি হুলিয়ান আলভারেসের জয়সূচক গোলে সহযোগিতাও করেন তিনি। ৩-০ গোলের জয়ে শেষ তিন বিশ্বকাপে দ্বিতীবারের মতো ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা।
আর ফাইনালের ২৩তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে বল জালে জড়িয়ে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জয়ের একধাপ কাছে নিয়ে যান মেসি। আসরজুড়ে ৭ গোল এবং ৩ গোলে সহায়তা করা মেসি শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরে বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটি নিয়েই। যেই ট্রফি ছোঁয়ার জন্য মেসি চষে বেড়িয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকা। আর এই অধরার ধরা পান এশিয়াতে এসে।
মন্তব্য করুন: