বিশ্বসেরা নারী ফুটবলারের গল্পটি কি জানেন?
২১ মার্চ ২০২৩
শৈশবের প্রিয় ক্লাব বার্সেলোনাতে খেলার স্বপ্ন যখন পূর্ণতা পেল, ততদিনে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে তাঁর বাবা। তখন থেকেই ফুটবলের প্রতিটি স্পর্শ উৎসর্গ করেন বাবা জোমে পুতেয়াসকে। গল্পটি ২০২২ এর ফিফা বর্ষসেরা নারী ফুটবলার অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াসের।
পুরো নাম অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস সেগুরা। ১৯৯৪ সালে বার্সেলোনার ছোট শহর মোলে দেল ভ্যালিসে জন্ম নেয়া অ্যালেক্সিয়ার পরিবারের সাথে ক্রীড়াজগতের সখ্যতা ছিল আগে থেকেই। ফুটবল নয়, পরিবারের প্রথম পছন্দ বাস্কেটবল। কিন্তু ফুটবলের প্রতি অ্যালেক্সিয়ার ছিল বাড়তি আগ্রহ এবং এদিকে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রেও পান পরিবারের পূর্ণ সমর্থন।
ফুটবলার হবার জন্য মূল প্রেরণা ছিল বাবার। তিনিই স্বপ্ন দেখেতেন, মেয়েকে বিশ্বসেরা ফুটবলার বানানোর। ২০১২ সালে আলেক্সিয়ার যখন স্পেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ আসে, তার এক সপ্তাহ আগে মারা যান বাবা। একই বছরে ডাক পান বার্সেলোনা সিনিয়র দলে। ঠিক সেখান থেকে বাবার স্বপ্নকে আগলে রেখে প্রতিদিন সফলতার নতুন দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কাতালান এই মিডফিল্ডার।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার জিতেছেন আলেক্সিয়া। ইউরো ২০২২ জয়ী ইংলিশ ফুটবলার বেথ মিড এবং ইউএসডব্লিউএনটি তারকা অ্যালেক্স মরগানকে পেছনে ফেলে পুরস্কারটি জিতেছেন এই বার্সা তারকা। স্বাভাবিকভাবেই জায়গা করে নিয়েছেন ফিফপ্রো ২০২২ নারী একাদশে।
বার্সায় ব্যক্তিগত এবং দলীয়ভাবে ২০২১-২২ সময়কালে অসাধারণ এক মৌসুম কাটিয়েছেন অ্যালেক্সিয়া। একদিকে দল অপরাজিত ছিল নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রত্যেকটি ম্যাচে। অন্যদিকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কাতালান এই অধিনায়ক ৩৪টি গোলের পাশাপাশি করেছেন ১৫টি অ্যাসিস্ট। এছাড়াও একই মৌসুমে বার্সেলোনার কোপা দে লা রেইনা জয় এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিতে আক্রমণভাগ থেকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুতেয়াস। অবশ্য ফাইনালে গোল করেও বার্সাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতাতে পারেননি অ্যালেক্সিয়া; লিয়নের কাছে হারতে হয়েছে ৩-১ গোলে। তবে সর্বোচ্চ ১১ গোল করে জিতে নিয়েছেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
টানা দুবার শুধু ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার না, সর্বোচ্চ সম্মাননার আরেক খেতাব ব্যালন ডি’অর জিতেছেন আলেক্সিয়া।
আলেক্সিয়া এখন ফুটবলের বাইরে। হাঁটুর ইনজুরির কারণে প্রায় নয় মাস ফুটবল খেলতে পারছেন না। জুন-জুলাইতে নারীদের যে বিশ্বকাপ, সেখানে তাঁর খেলা নিয়েও আছে সংশয়। সে সংশয় দূর করে কি বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন আলেক্সিয়া? আগের ২০১৫ ও ২০১৯ নারী বিশ্বকাপ দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু দুই আসরেই স্পেন ভালো পার্ফমেন্স করতে পারেনি; ভালো করতে পারেননি আলেক্সিয়া। ২০১৯ আসরের রাউন্ড অব সিক্সটিনে পৌঁছানো এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য স্পেন নারী ফুটবল দলের। এবার সংশয় কাটিয়ে দলে ফিরে সর্বোচ্চ সাফল্য কি আনতে পারবেন তিনি? বিশ্বকাপ কি জিততে পারবেন স্পেনের জার্সিতে?
বাবা জোমে পুতেয়াসের আদুরে কন্যা অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াসের ওই একটি অর্জনই তো বাকি!
মন্তব্য করুন: