হ্যাটট্রিকে অমরত্বে ‘কিং করিম’
৬ এপ্রিল ২০২৩
লিওনেল মেসি চলে গেছেন বার্সেলোনা থেকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন আরও আগে। স্প্যানিশ ক্লাব ফুটবলের রাজা কে – তা নিয়ে এ দুজনের মধ্যে কী জমজমাট লড়াই হত! হালফিলে সেটা একেবারেই অনুপস্থিত। স্প্যানিশ ফুটবলের রাজা এখন একজনই। কিং করিম। করিম বেনজেমা।
‘এল ক্লাসিকো’কে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে সেটাই আরেকবার প্রমাণ করলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি ফরোয়ার্ড।
বয়স হয়ে গেছে ৩৫ বছর। এ বয়সে একজন ফুটবলার ক্যারিয়ারের সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন বলেই ধরা হয়। তবে বেনজেমার বেলায় এসব সাধারণ ফুটবলীয় চিন্তাভাবনা দূরে রাখাই ভালো। গত বছরই তো জিতেছেন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অর। এ মৌসুমে ইনজুরির কারণে ভুগলেও এখন তা পেছনে ফেলে এসেছেন। ফিরেছেন সেই বিশ্বসেরার ফর্মে।
এই হ্যাটট্রিকে বেনজেমা আবার জানান দিলেন, বয়স তাঁর জন্য স্রেফ একটি সংখ্যা।
এই তো দিন চারেক আগে স্প্যানিশ লা লিগায় রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে বেনজেমা করেন তিন গোল। এবার কোপা দেল রে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে আবার হ্যাটট্রিক। প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে গিয়ে ১-০ গোলে জিতে এসেছিল বার্সেলোনা। সর্বশেষ তিনটি ‘এল ক্লাসিকো’তেই হয় জাভির দলের। ফাইনালে ওঠায় তাই ফেভারিট ছিল বার্সাই।
বেনজেমার বিস্ফোরণে ওসব হিসাব-নিকাশ যায় উড়ে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গোলের পর তাঁর হ্যাটট্রিক। রিয়ালের জার্সিতে বেনজেমার এটি নবম হ্যাটট্রিক। ১৯৬৩ সালে ফেরেঙ্ক পুসকাসের পর ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি।
তাতেই দুই লেগ মিলিয়ে বার্সাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে কোপা দেল রের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ। ৬ মে ওসাসুনার বিপক্ষে সে ফাইনাল। আরেকটি ট্রফি তাই দেখতেই পাচ্ছে ‘লস ব্লাঙ্কোস’।
ইনজুরি-জর্জর মৌসুমেও এরই মধ্যে ৩১ ম্যাচে ২৫ গোল হয়ে গেছে বেনজেমার। ২০১৮ সালে রোনালদো রিয়াল ছাড়ার পর থেকেই হয়ে উঠেছেন দলের মূল তারকা। আলো ছড়াচ্ছেন প্রতিনিয়ত; আলোকিত করছেন রিয়াল মাদ্রিদ।
১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের লিঁওতে এক আলজেরিয়ান পরিবারের জন্ম বেনজেমার। আট বছর বয়সে স্থানীয় এক ক্লাবে ফুটবলে হাতেখড়ি। কে জানত, ছোট্ট এই বেনজেমা একদিন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের পোস্টার বয় হবেন!
২০০৯ সালে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে আসেন রিয়াল মাদ্রিদে। একই বছর রোনালদোও আসেন সেখানে। পরের ৯ মৌসুমে রিয়ালে যে খারাপ খেলেছেন বেনজেমা, তা নয়। তবে রোনালদো নামের মহানক্ষত্রের পাশে খুব জ্বলজ্বলেও ছিলেন না।
২০১৮ সালে রোনালদোর রিয়াল ছাড়ার পর থেকে ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকে বেনজেমার পারফরম্যান্স। ২০২১-২২ মৌসুমটা তো চোখ ধাঁধানো। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে করেছেন ৪৪ গোল। লা লিগায় ২৭ গোলে জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার ‘পিচিচি ট্রফি’। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৫ গোল করে দলকে জেতান শিরোপা। নিজে জেতেন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অর। ফ্রান্সের পঞ্চম এবং স্ট্যানলি ম্যাথিউসের পর সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে ৩৫ ছুঁইছুঁই বয়সে জেতেন এ পুরস্কার।
ফ্রান্স জাতীয় দলটা অবশ্য বেনজেমার জন্য বরাবরই হতাশার। মাঝে ৬ বছর তো তাকে ডাকাই হয়নি। ম্যাথিউ ভালবুয়েনার সেক্স টেপ স্ক্যান্ডালে সম্পৃক্ততার কারণে। ২০২১ সালে ইউরোতে আবার ডাকা হয়। ভালোই খেলছিলেন। গত বছরের বিশ্বকাপের সময় আবার দুর্ভাগ্য। পড়লেন ইনজুরিতে। কোচ ও সতীর্থদের সঙ্গেও ঝামেলা লেগে ছিল। খেলা হয়নি তাই বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ফ্রান্সের হারের পর দিন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন বেনজেমা।
ফ্রান্সের কিংবদন্তি কি বলা যাবে বেনজেমাকে? হয়তো না। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের। অবশ্যই। রোনালদোর ৪৫০ গোলের পর রিয়ালের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বেনজেমা। ৬৩৬ ম্যাচে ৩৪৮ গোল তাঁর।
রোনালদোকে কখনই ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না বেনজেমা। গোলে না, কীর্তিতে না, বীরত্বে না। তবে রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবল ইতিহাসে বেনজেমার জন্যও একটা জায়গা থাকবে নিশ্চিতভাবে।
বার্সেলোনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকে সে অমরত্ব যেন আরেকটু নিশ্চিত করলেন করিম বেনজেমা।
মন্তব্য করুন: