খ্যাপাটে আর্জেন্টাইন কোচের নতুন মিশন
১৬ মে ২০২৩
তাঁকে বলা হয় কোচদের কোচ। বর্তমানে বিশ্বখ্যাত কোচদের অনেকেই তার অধীনে খেলেছেন। ডিয়েগো সিমিওনে, মাউরিসিও পচেত্তিনো এবং জেরার্দো মার্তিনোও খেলেছিলেন ৬৭ বছর বয়সী এই কোচের অধীনে। গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন তাদের প্রাক্তন কোচ দ্বারা। উরুগুয়ে জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন সেই মার্সেলো বিয়েলসা।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে লিডস ইউনাইটেড ছাঁটাই করার পর থেকেই বেকার বসেছিলেন বিয়েলসা। তিন মাস ধরে আলাপ-আলোচনার পর উরুগুয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন এই আর্জেন্টাইন।
আধুনিক ফুটবলে কোচের সাফল্য যেখানে শিরোপা দিয়ে পরিমাপ করা হয়, সেখানে বিয়েলসার ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম। তাঁর ঝুলিতে ট্রফি না থাকলেও আছে খেলোয়াড় ও সমবয়সী কোচদের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব। বিয়েলসা ট্রফি নিয়ে গর্ব করতে পারেন না কিন্তু তিনি যা নিয়ে গর্ব করতে পারেন, তা হল আধুনিক যুগের সেরা কোচদের প্রশংসা।
তার সবচেয়ে বড় ভক্তদের একজন পেপ গার্দিওলা। ২০০৬ সালে খেলোয়াড় গার্দিওলা অবসর নেওয়ার পরে বিয়েলসার সাথে দেখা করেন। আলোচনা করেছিলেন ফুটবলের কৌশল নিয়ে। এছাড়া জিনেদিন জিদানসহ অসংখ্য পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়ের আদর্শ এই আর্জেন্টাইন আইকন।
‘কোচদের কোচ’ নামের সাথে সাথে বিয়েলসার আরেকটি নাম আছে। ‘খ্যাপাটে কোচ’ বা ‘এল লোকো।’ অনুশীলনে যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে খুশি হন না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোচিং চালিয়ে যান। কোনও কোনও কৌশল টানা দুই ঘন্টাও চালিয়ে গেছেন।
নিজ দেশ আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি তিনি। ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট দল হিসেবে বিবেচিত হলেও গ্রুপ স্টেজ থেকেই ছিটকে পরে তাঁর দল।
তবে চিলির দায়িত্বে থাকাকালে সফলতা পান তিনি। কোচ হিসেবে তার সাড়ে তিন বছরের সময়কালে তিনি পুরো জাতির মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছিলেন। কয়েক দশক ধরে হীনমন্যতায় ভোগা একটি ভীত দলকে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি। যারা ভাবতো আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের মতো আঞ্চলিক ফুটবল পরাশক্তিকে কখনো হারাতে পারবে না।
কিন্তু সেই চিলিই ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকা জেতে। কোচ ছিলেন হোর্হে সাম্পাওলি। তিনি রিয়েলসার শিষ্য। বিয়েলসার প্রভাব ওই দলের উপর ছিল প্রবলভাবে। পরের বছর ২০১৬ সালেও কোপা আমেরিকা জিতে চিলি। অ্যালেক্সিস সানচেজ, আর্তুরো ভিদাল এবং চিলির সোনালী প্রজন্মের খেলোয়াড়রা যে বিশ্বাস, শৃঙ্খলা, সাহস এবং কৌশলগত নকশা, সেটি বিয়েলসেরই দেয়া।
বিয়েলসার বাবা ছিলেন আইনজীবী। তাঁর ভাই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরিবারের অর্থ ছিল। তবে ফুটবলীয় পরিবারে না থেকেও বিয়েলসা ফুটবলে একটি আলাদা পরিবার বানিয়ে নিয়েছেন। জীবনের গল্প সাজিয়েছেন ফুটবলকে ঘিরে।
তাই তো পচেত্তিনো বলেছিলেন, ‘মার্সেলো আমার বাবার মতো, আমার দ্বিতীয় বাবা। তার সাথে আমার সম্পর্ক শুরু হয়েছিল যখন আমি ১২ বা ১৩ বছর বয়সে ছিলাম। তিনি একজন দুর্দান্ত কোচ। আমি তাকে সবসময় ভালবাসব কারণ তিনি আমার ক্যারিয়ারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।’
এমন কতজনের ক্যারিয়ারেই তো গুরুত্বপূর্ণ এই খ্যাপাটে মার্সেলো বিয়েলসা! উরুগুয়ের ফুটবলেও কি রাখতে পারবেন অমন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব?
মন্তব্য করুন: