আর্জেন্টিনার ‘স্পাইডার’ আলভারেজ ছুটছেন
১৮ মে ২০২৩
আসলেন। খেললেন। গোল করলেন! তার আগেই অবশ্য ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা হুলিয়ান আলভারেজ শেষ সময়ে গোল করে নিজেকে চেনালেন আরেকবার। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির জয়টাও হল বিস্ফোরক। ৪-০ ব্যবধানে।
ম্যানসিটির এই স্ট্রাইকারের জন্ম আর্জেন্টিনার কালচিন শহরে। মধ্যবিত্ত শ্রমজীবী পরিবারে বেড়ে ওঠা আলভারেজের আরও অনেক লাতিন শিশুর মত ফুটবলই ছিল প্রথম প্রেম। বাবা গুস্তাভ আলভারেজ ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার এবং মা মারিয়ানা আলভারেজ কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক।
ছোটবেলা থেকেই আলভারেজের আশ্চর্য ফুটবলীয় দক্ষতা। বয়স যখন চার/পাঁচ বছর, তখন থেকেই তাঁকে ‘এল আরানিতা’ বা ‘লিটল স্পাইডার’ বলে ডাকা হত। নামটি দিয়েছিল তাঁর এক ভাই। ব্যাখ্যা হিসেবে আলভারেজের বাবা বলেছিলেন, ‘খেলার সময় হুলিয়ানের কাছে থেকে বল কেড়ে নেয়া বেশ জটিল ছিল। দেখলে মনে হত তাঁর দুটি নয়, অসংখ্য পা আছে। সে ছোট ছিল কিন্তু দ্রুত গতির কারণে কেউ বল নিতে পারত না তাঁর কাছে থেকে।’ সেই ছোট্ট স্পাইডার বড় হয়ে ‘এল আরানা’ বা ‘স্পাইডার’ নামে পরিচিত হন।
খুব সহজেই ইউরোপে এসে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখাতে পারতেন। ১১ বছর বয়সে ট্রায়াল দিয়েছিলেন রিয়ালে। সেখানে একটি টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন রিয়ালের জার্সিতে। শিরোপা জিততে সহয়তাও করেন রিয়ালকে। কিন্তু তাঁর অল্প বয়স বাঁধা হয়ে দাড়ায় সেখানে। সেই সময়ে ১৩ বছরের আগে বাইরের প্লেয়ারদের রেজিস্ট্রেশন করা যেত না ইউরোপে। সেই কারণেই আর রিয়ালে খেলা হয়নি তাঁর। বোকা জুনিয়র্সেও ট্রায়াল দেন আলভারেজ।
তবে শেষ পর্যন্ত ছোটবেলার পছন্দের ক্লাব রিভার প্লেটে যোগ দেন তিনি। সেখানেও গড়েছেন ইতিহাস। সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নস লিগ খ্যাত কোপা লিবার্তোদোরেসে এক ম্যাচে করেছেন ছয়টি গোল। রিভার প্লেটের ১২১ বছরের ইতিহাসে কোন খেলোয়াড় এক ম্যাচে ছয় গোল করেনি।
আলভারেজ আর্জেন্টিনা দলেও বেশ আগে থেকেই ছিলেন। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসিদের মূল দলের সঙ্গে তরুণ প্রতিভাবান আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের একটি দল গিয়েছিল। সেখানে ছিলেন আলভারেজ। চার বছর পর সেই তরুণই দাপটের সাথে খেলেছেন মূল দলের জার্সিতে। মেসিদের সঙ্গে।
বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনির আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। ফর্ম হারানো লাউতারো মার্তিনেজের জায়গায় মূল একাদশে সুযোগ পেয়েছে আলভারেজ। গোল করেছেন ৪টি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের যাত্রায় মেসির পাশাপাশি তিনিও রেখেছেন অবদান।
বিশ্বকাপের আগেই ম্যানচেস্টার সিটি কিনে নেয় আলভারেজকে। অভিজ্ঞ কোচ পেপ গার্দিওলা চিনতে ভুল করেননি এই আর্জেন্টাইন তারকাকে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনির মতো তিনিও তার গোপনীয় রত্ন যেন রেখে দিয়েছিলেন সঠিক সময়ে ব্যবহারের জন্যেই। আর আলভারেজও কোচের প্রত্যাশার প্রতিদান দিয়েছেন। আর্লিং হলান্ডের কারণে নিয়মিত একাদশে সুযোগ হয় না। তবে সুযোগ পেলেই দেখান প্রতিভার ঝলক।
যেমনটা দেখালেন চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালেও।
আলভারেজের বয়স মাত্র ২২ বছর। এরই মধ্যে কত কত সাফল্য! তবে ক্যারিয়ারের তো শুরু মাত্র! জাতীয় দল আর্জেন্টিনা এবং ক্লাব দল ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে আরও অনেক সাফল্য নিশ্চিতভাবেই পাবেন ‘স্পাইডার’ আলভারেজ।
মন্তব্য করুন: