খ্যাপাটে ইব্রাহিমোভিচকে মিস করবে ফুটবল
৬ জুন ২০২৩
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ! ফুটবল মাঠে অপূর্ব এক ফরোয়ার্ড। মাইক্রোফোনের সামনে অতুলনীয় এক চরিত্র! দুয়ে মিলে এই সুইডিশ স্ট্রাইকারের তুলনা তিনি নিজেই।
এই ইব্রাহিমোভিচ বিদায় জানিয়েছেন ফুটবলকে। ৪১ বছর বয়সে এসে। ২৪ বছরের ক্যারিয়ার শেষে।
কয়েকদিন আগেও তো বলেছিলেন, এখনো অবসরের সময় হয়নি তাঁর। তবে সে কথার সপ্তাহ না যেতেই জানিয়ে দিলেন তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সেদিন সিরি ‘এ’-র শেষ ম্যাচ ছিল এসি মিলানের। সেখানেই এই ঘোষণা। কান্নায় ভেঙে পরে ইব্রাহিমোভিচ জানালেন, শুধু ক্লাব ছাড়ছেন না; ফুটবল ক্যারিয়ারেরই ইতি টানছেন।
সাবেক এই সুইডিশ স্ট্রাইকার ক্যারিয়েরজুড়ে দুর্দান্ত সময় পার করেছেন। চারটি ভিন্ন দেশে ১৩টি লিগ শিরোপা জিতেছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে আক্ষেপ বলতে একটাই, কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি।
নিজ দেশের ক্লাব মালমে এফএফ দিয়ে তার পথচলা শুরু। ১৯৯৯ সালে। এরপর আয়াক্স হয়ে খেলেছেন জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, এসি মিলান, পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং এলএ গ্যালাক্সির মত ক্লাবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বারের মত ইব্রা ফেরেন মিলানে। ৬ মাসের চুক্তিতে। চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছেন এরপর।শেষে এখানেই থামলেন।
সুইডেনের জার্সিতে ১২২ ম্যাচে ৬২টি গোল করেছেন। দেশের হয়ে গোলের সংখ্যায় সর্বোচ্চ।
ইব্রাহিমোভিচ ফুটবলীয় দক্ষতার কারণে পরিচিত। পরিচিত বিতর্কিত সব কথাবার্তার কারণেও। কখনো মন্তব্য করেছেন সতীর্থদের নিয়ে, কখনো কোচদের নিয়ে। এবং অনেকটা সময়ই নিজেকে নিয়ে। খ্যাপাটে ইব্রার কথা মানেই ছিল ‘সংবাদ শিরোনাম’।
এই যেমন তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আর্সেনাল প্রতিভাবান এই তরুণ ফরোয়ার্ডকে সাইন করতে চেয়েছিলেন। তবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। কারণ দলে নেয়ার আগে ট্রায়াল দিতে বলা হয়েছিল তাকে। আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারকে ইব্রা বলেছিলেন, ‘ট্রায়ালের প্রশ্নই আসে না। ইব্রা কখনো অডিশন দেয় না। হয় আপনি আমাকে জানেন অথবা জানেন না। আর যদি আপনি আমাকে না জানেন, তার মানে আপনি আমাকে সেভাবে চান না।’
২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্লেঅফ ম্যাচ। সুইডেনের প্রতিপক্ষ পর্তুগাল। ইব্রাহিমোভিচকে প্রশ্ন করা হলো ম্যাচের ফলাফল কি হতে পারে? উত্তর দিলেন- ‘শুধু ঈশ্বর জানেন।’ রিপোর্টার বললেন- এটাতো অসম্ভব কাজ। ইব্রা জবাব দিলেন- ‘আপনি এখন তার সঙ্গে কথা বলছেন।’
কিন্তু পর্তুগালের কাছে শোচনীয় হারে বিশ্বকাপের মূল পর্বের খেলার যোগ্যতা হারায় সুইডেন। সেই সময়ই ইব্রার মনে করেন তাঁকে ছাড়া ব্রাজিলের ২০১৪ বিশ্বকাপ জৌলুসতা হারিয়েছে। তখন তিনি মন্তব্য করেন, ‘আমাকে ছাড়া বিশ্বকাপ দেখার কিছু নেই, তাই বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয়।’
এই দশকের অন্যতম সেরা কোচ পেপ গার্দিওলা। তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয়েছেন ইব্রার কাছে থেকে। বিভিন্ন সময় বাজে মন্তব্যও করেছেন তাঁকে নিয়ে। এমনি একবার বলেন, ‘গার্দিওলা তাঁর দার্শনিক কথাবার্তা শুরু করেছিলেন। খুব কমই শুনছিলাম আমি। কেন শুনব আমি? এটা ছিল রক্ত, ঘাম ও কান্না মিলিয়ে একটি উন্নতমানের বুলশিট গল্প।’
আবার জোসে মরিনহো ও গার্দিওলার পার্থক্য নিয়েও কথা বলেন তিনি। ইব্রা বিশ্বাস করতেন, মরিনহো তাকে একজন প্রকৃত খেলোয়ার হিসেবে বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু গার্দিওলা ইব্রার সেরাটা তুলে আনতে পারেননি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন আমাকে কিনছেন, তখন একটি ফেরারি গাড়ি কিনছেন। ফেরারি চালানোর জন্য ট্যাঙ্কে প্রিমিয়াম পেট্রোল রাখতে হবে। গার্দিওলা ডিজেলে ভর্তি এবং তিনি শুধু গ্রামাঞ্চলেই ঘুরে বেড়ান। তাঁর একটা ফিয়াট কেনা উচিত।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়ে ইব্রা। সে ক্লাবের সমর্থকদের প্রিয় ‘কিং’ এরিক ক্যান্টোনা। তাকে ছাপিয়ে যেতে পারবেন ইব্রা? তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ম্যানচেস্টারের রাজা হব না, ঈশ্বর হব।’
ক্যারিয়ারের শেষবেলায় আসা ইব্রাকে একবার প্রশ্ন করা হয়- তিনি কি কোচিং পেশায় আসতে পারেন। তখন অকপটে বলে দেন, ‘অসম্ভব। কারণ আমি কোচ হলে ম্যাচ চলাকালীন দুজন খেলোয়ারকে চড় মারতাম। আর ম্যাচ শেষে আটজনকে।’
দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনেছেন ইব্রা। মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছেন নিশ্চয়ই। তবে তার মধ্যে ফুটবলও চালিয়ে গেছেন৷ কথার পাশাপাশি তাঁর পা মাথাও চলেছে সমানতালে! কে ভুলতে পারবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর সেই অবিশ্বাস্য বাইসাইকেল কিকের গোলটি!
ফুটবলে থেকে ইব্রাহিমোভিচের বিদায় কেবল একজন ‘গ্রেট’ ফুটবলারের বিদায় নয়। এক ‘কালারফুল ক্যারেক্টার’-এরও বিদায়। ফুটবলকে নিশ্চয়ই মিস করবেন ইব্রা। ইব্রাকেও কি খুব করে মিস করবে না ফুটবল!
মন্তব্য করুন: