ইংলিশ ফুটবলে কোথায়, কোন পজিশনে, কেমন খেলেন হামজা?

২০ মার্চ ২০২৫

ইংলিশ ফুটবলে কোথায়, কোন পজিশনে, কেমন খেলেন হামজা?

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা প্রথম ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার অপেক্ষায় আছেন হামজা চৌধুরী। দলের সঙ্গে যোগ দিতে দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংলিশ এই ফুটবলার। তাকে নিয়ে আগ্রহেরও কমতি নেই ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে। দেখে নেওয়া যাক ইংলিশ ফুটবলে কেমন ছিল হামজার পারফরম্যান্স।

হামজার জন্ম ও বেড়ে ওঠার সবটুকুই হয়েছে ইংল্যান্ডের লেস্টারশায়ারে। খেলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড ও রাইট ব্যাক পজিশনে। এই দুই পজিশনের কাজ হলো মূলত দলের মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগ সামলানো।

হামজার ফুটবলে হাতেখড়ি হয় লেস্টার সিটির একাডেমিতে ২০০৫ সালে, ৭ বছর বয়সে। চলতি মৌসুমের প্রথম অংশেও ছিলেন প্রিমিয়ার লিগের দলটিতে। তবে শীতকালীন দলবদলে ধারে তিনি যোগ দেন দ্বিতীয় স্তরের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডে। সেখানে তিনি এখন পর্যন্ত ৯টি ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে ৭টিতেই শুরুর একাদশে ছিলেন।

লেস্টার সিটির একাডেমিতে ফুটবল খেলা শুরু করলেও হামজার ক্লাব ক্যারিয়ারটা শুরু হয় ইংলিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তর লিগ ওয়ানের দল বার্টন আলবিয়নের হয়ে ২০১৬ সালে। সেখানে এক মৌসুম ধারে খেলেছিলেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে লেস্টার সিটির হয়ে অভিষেক হয় হামজার। লিভারপুলের বিপক্ষে ইংলিশ লিগ কাপের তৃতীয় রাউন্ডে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। একই বছর নভেম্বরে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় হামজার। টটনাম হটস্পারের বিপক্ষে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। পরের বছর এপ্রিলে মূল একাদশের হয়ে প্রথমবারের মতো মাঠে নামেন হামজা। ২০২০ সালে লেস্টারের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম গোলটি করেন তিনি।

২০২০ সালের অক্টোবরে উয়েফা ইউরোপা লিগে অভিষেক হয় হামজার। এই প্রতিযোগিতায় তিনি খেলেছেন ৯টি ম্যাচ। ২০২১ সালে লেস্টারের এফএ কাপ জয়ের ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।

এফএ কাপের ফাইনালে ম্যাচের ৮২তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন হামজা২০২২ সালে ধারে এক মৌসুমের জন্য দ্বিতীয় স্তরের দল ওয়ার্টফোর্টে যোগ দেন হামজা। সেখানে তিনি খেলেন ৩৬টি ম্যাচ।

সব মিলিয়ে ক্লাব ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত চারটি দলে খেলেছেন হামজা। শেফিল্ডের সঙ্গে ধারের চুক্তি শেষ হবে চলতি মৌসুম শেষে। আর ২০২৭ সাল পর্যন্ত তার চুক্তি আছে লেস্টারের সঙ্গে। এখানে তার বাৎসরিক বেতন ২৬ লাখ পাউন্ড।

ট্রান্সফারমার্কটের মতে, লেস্টারের হয়ে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ছয় মৌসুমে মোট ৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন হামজা। গোল করেছেন একটি এবং গোল করিয়েছেন ২টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই দলের হয়ে ১৩১ ম্যাচ খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। হলুদ কার্ড দেখেছেন কেবল একবার।

ক্লাব ফুটবল ছাড়াও ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়েও খেলেছিলেন হামজা। ২০১৮ সালে দেশটির অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে তার অভিষেক হয়। পরের বছর উয়েফা অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়শিপের দলে ডাক পান তিনি। ফ্রান্সের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি।

বাংলাদেশের হয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে হামজাইংল্যান্ডের হয়ে খেলার স্বপ্নও ছিল হামজার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এরপর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের হয়ে হামজার খেলার বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। তবে এর জন্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হতো হামজার।

মা-বাবা বাংলাদেশের হলেও ইংল্যান্ডে জন্ম ও বেড়ে ওঠায় হামজার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছিল না। এজন্য বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তিনি। ২০২৪ সালের আগস্টে তা হাতে পান হামজা। এরপর ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য ছাড়পত্র পান তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৯ ডিসেম্বর ফিফার প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি দিয়েছে বলে নিশ্চিত করে বাফুফে।

মন্তব্য করুন: