ক্লাব বিশ্বকাপের দল নির্ধারণ কীভাবে?
প্রায় সারা বছরই ক্লাব ফুটবলের খেলা চলে। আলাদা করে ক্লাবদের নিয়ে ‘বিশ্বকাপ’ আয়োজন তাই অসম্ভব। কিন্তু সেরাদের সেরা নিয়ে তো শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হতেই পারে। সেই চিন্তা থেকেই চলতি শতাব্দীর শুরুতে ফিফা চালু করেছে ক্লাব বিশ্বকাপ। শুরুতে নাম ছিল ফিফা ক্লাব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। তবে ২০০৫ সাল থেকে নামকরণ হয়েছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিযোগিতায় কোন কোন ক্লাব খেলবে, তা নির্ধারণ হয় কীভাবে? শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটা হয় বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলো নিয়েই। ছয় কনফেডারেশনের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আয়োজক দেশের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব - এই মোট সাত দলের ক্লাব বিশ্বকাপ। আয়োজক দেশের লিগ চ্যাম্পিয়নই সেখানকার সেরা ক্লাব; বোঝা গেল। কিন্তু বাকি ছয় দল আসে কীভাবে?
২০২৩ ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝানো যাক। এখানে ইউরোপ অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দল হিসেবে খেলছে রিয়াল মাদ্রিদ। লাতিন আমেরিকা থেকে এসেছে কোপা লিবের্তাদোরেস চ্যাম্পিয়ন ফ্লামেঙ্গো। উত্তর আমেরিকা থেকে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী সিয়াটল সাউন্ডার্স। ওশেনিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি সেখানকার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী অকল্যান্ড সিটি। আর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানকার চ্যাম্পিয়নস লিগের চ্যাম্পিয়ন ওয়াইদাদ কাসাব্লাঙ্কা।
সঙ্গে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন দলের থাকার কথা। কিন্তু ২০২২ সালের এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলাই শেষ হয়নি। তাই এশিয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গতবারের চ্যাম্পিয়ন আল হিলালকে পাঠিয়েছে প্রতিনিধি হিসেবে। আয়োজক দেশের ক্লাব নির্বাচনেও এবার হাঁটতে হয়েছে অন্য পথে। এবারের ক্লাব বিশ্বকাপের আয়োজক মরক্কো। নিয়ম অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশটির ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নের খেলা কথা স্বাগতিক হিসেবে। কিন্তু মরক্কোর লিগ চ্যাম্পিয়ন ওয়াইদাদ কাসাব্লাঙ্কাই তো জিতেছে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নস লিগ। তাহলে? এক ক্লাব তো আর দুটো জায়গা নিতে পারে না।
সমাধান হিসেবে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নস লিগের রানার্সআপ আল আহলির তাই সুযোগ মিলেছে ক্লাব বিশ্বকাপে। তবে মিশরের ক্লাব হয়েও টুর্নামেন্টে ‘স্বাগতিক’ স্পট নিয়েছে তারা। নকআউট পর্বের এই ক্লাব বিশ্বকাপের শুরুটা হয় প্লে-অফ দিয়ে। এখানে স্বাগতিক স্পটের দলটি মুখোমুখি হয় ওশেনিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নের। এই ম্যাচের জয়ী দল ওঠে পরের রাউন্ডে। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন ক্লাব। ৪ দলের দুটি ম্যাচ। জয়ী দুই দল ওঠে সেমিফাইনালে। এই রাউন্ডে অপেক্ষায় থাকে সবচেয়ে শক্তিশালী দুই ক্লাব - ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নরা। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা লিবের্তাদোরেসের শিরোপাজয়ী দুই ক্লাবের সঙ্গে খেলে জিতলে তবেই ফাইনাল।
তবে অনুমিতভাবেই সেটি হয় খুব কম। বেশিরভাগ সময় ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল হয় ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের মধ্যে। আর বেশিরভাগ সময়ই চ্যাম্পিয়নশিপ যায় ইউরোপে। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ীদের ১৮ বারের মধ্যে ১৪ শিরোপা জয়েই তার প্রমাণ। সেটাই কি হওয়ার নয়? রূপে, রঙে, শক্তিতে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল যে যোজন যোজন এগিয়ে!
মন্তব্য করুন: